সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
২৪ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণা-১ পর্বত জয় বাবর আলীর      গাজায় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ      গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছে, নিহত অর্ধশতাধিক      চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ       গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি      বাধ্যতামূলক ছুটিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি      বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা       
খোলাকাগজ স্পেশাল
বিশেষ সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:৪৭ এএম  (ভিজিটর : ৩৬১)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ছিলেন সরকারি কলেজের শিক্ষক এবং পৌরসভার মেয়র। বর্তমান দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব তিনি। অতি সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন দৈনিক খোলা কাগজের। একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন অজানা অনেক কথা। তার ব্যক্তিগত জীবন, রাজনৈতিক জীবনসহ নানা বিষয়ে উঠে এসেছে সেই দীর্ঘ আলাপচারিতায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খোলা কাগজের নির্বাহী সম্পাদক মো. মনির হোসেন। সেই আলাপচারিতার অংশবিশেষ পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-

খোলা কাগজ : আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

মির্জা ফখরুল : ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। দেশ নিয়ে চিন্তা সব সময়ই থাকে, কিন্তু আশা হারাই না।

খোলা কাগজ : প্রথমেই আমরা আপনার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই। আপনি কীভাবে রাজনীতিতে এলেন?

মির্জা ফখরুল : আমার এক চাচা ছিলেন নুরুল হুদা কাদের বক্স, ডাক নাম ছিল ‘ছুটি’। উনি কমিউনিস্ট পার্টির বড় নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত মানুষ। রাজনৈতিক কারণে যখনই আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হতো উনি ঠাকুরগাঁওয়ে আমাদের বাসায় থাকতেন। তার কাছেই আমরা গল্প শুনতাম বাম রাজনীতির বিষয়গুলো। সেই চাচার কাছে মাওসেতুং, লেনিন, কার্ল মার্কসদের গল্প শুনে শুনে বাম রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। পরবর্তী সময়ে যখন ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হই তখন বিশ্বজুড়ে বাম রাজনীতির রমরমা অবস্থা। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, চীনের অভ্যুত্থান, সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র- সব মিলিয়ে তখন বাম রাজনীতির স্বর্ণযুগ বলা যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাম রাজনীতি আকৃষ্ট করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রাশেদ খান মেনন, মাহাবুবউল্লাহ- এদের দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হই এবং ছাত্র ইউনিয়নে জড়িয়ে পড়ি। তখন খুব অ্যাক্টিভলি ছাত্র ইউনিয়ন করতাম, এভাবেই আমার রাজনীতিতে আসা।

খোলা কাগজ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ের রাজনীতি সমন্ধে যদি কিছু বলেন-

মির্জা ফখরুল : যুদ্ধের সময় আমি ইন্ডিয়ায় চলে যাই। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে শুনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্র কায়েমের কথা বলছে। তখন ভাবি সমাজতন্ত্র কায়েম হলে তো আর রাজনীতির প্রয়োজন হয় না। আমি তখন শিক্ষকতা পেশায় চলে যাই। ৭২ সালে আমি সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ওই সময় থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আমি সরকারি কলেজেই ছিলাম। সে সময় দেশের অবস্থান দেখেছি, বাম রাজনীতিকদের ওপর কি পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে সেটা দেখেছি। জাসদ তৈরি হওয়া দেখেছি, উত্থান দেখেছি; একইসঙ্গে দলটিকে কীভাবে দমন করা হয়েছে সেটাও দেখেছি- এ জিনিসগুলো আমার মধ্যে অনেকটা প্রভাব বিস্তার করেছিল।

খোলা কাগজ : বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কখন এবং কীভাবে যুক্ত হলেন?

মির্জা ফখরুল : ৭৫-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের উত্থান দেখেছি খুব কাছ থেকে। এরপর যখন যুক্তফ্রন্ট তৈরি হলো তখন এস এ বারী এটি সাহেবকে উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন জিয়াউর রহমান। এস এ বারী এটি সাহেব তখন আমাকে উনার প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়ে যান। আমি তখন সরকারি ডিপুটেশনে ইউনেস্কো ন্যাশনাল কমিশনে কাজ করতাম। পরে বিএনপি সরকারের পাঁচ বছর আমি উনার সঙ্গে কাজ করেছি। সে সময় জিয়াউর রহমানকে খুব কাছ থেকে দেখা, তার কাজগুলো দেখা। তার সততা, তার নিষ্ঠা, তার প্রজ্ঞা-দূরদৃষ্টি আমাকে প্রচণ্ডভাবে আকর্ষণ করে। সে কারণেই জিয়াউর রহমানের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা সৃষ্টি হয় এবং সে সময় বিএনপিতে যেসব নেতা ছিলেন তারাও অত্যন্ত যোগ্য, সৎ ও একনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। যেমন এস এ বারী এটি সাহেবের সঙ্গে আমি কাজ করতাম- খুব রেয়ার, এ রকম রাজনীতিবিদ আজকাল পাওয়াই যাবে না। এত সৎ মানুষ, এত যোগ্য মানুষ; মানুষের জন্য ফিলিংস- এগুলো এখন আর দেখা যায় না। ওই সময়টা আমাকে প্রভাবিত করেছে।

খোলা কাগজ : প্রসঙ্গক্রমে জানতে চাই- তখনকার রাজনীতি আর এখনকার রাজনীতি দুটোকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মির্জা ফখরুল : আকাশ আর পাতাল। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তার আগে যা ছিল তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক আর স্বার্থপরতা, আমি এককথায় বলি নষ্ট রাজনীতি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামনে কী হবে তা বলতে পারছি না, তবে আমরা ভালো কিছুর জন্য আশাবাদী।

খোলা কাগজ : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পলায়ন এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন এ বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল : তারা চেষ্টা করছে ভালো কিছু করার। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা সিনসিয়ারলি চেষ্টা করছেন, আরো সিনিয়র যারা আছেন তারাও চেষ্টা করছেন কিছু করার জন্য। কিন্তু জুনিয়র যারা আছেন তাদের রাজনৈতিক একটা লক্ষ্য আছে। তারা ইতোমধ্যেই একটা দল তৈরি করেছে এবং তারা এটাকে ক্ষমতার কাছাকাছি আনতে চায়। আমি নেগেটিভ বলছি না, পজেটিভলি বলছি- সেখান থেকে তারা দেশের জন্য কাজ করতে চায়।

খোলা কাগজ : আপনি জানেন গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দল গঠনের পর এই স্বল্প সময়ে আমরা তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের থেকে বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের খবরও শুনেছি। আপনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে দলটির ভবিষ্যৎ বিষয়ে কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল : আমার কাছে যেটা মনে হয়- ওদের তো আগের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও ছিল না। সময়-মুহূর্ত-কাল সব মিলিয়ে দেশে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব তারা দিয়েছে, তাতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা পরিকল্পিতভাবে একটা পলিটিক্যাল পার্টি বা একটা পলিটিক্যাল কনভিকশন নিয়ে এটা করেছে বলে আমার মনে হয় না- তাই এ সমস্যাগুলো হচ্ছে। এখন তাদের সামনে ভাসছে অতীতের রাজনীতিবিদদের চেহারা। অতীতের রাজনীতিবিদরা কীভাবে নির্বাচন করেছেন, কীভাবে পার্লামেন্টে গিয়েছেন তারপর কীভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়েছেন- এখন তারা সেটাই ফলো করছে। তবে তাদের ইনটেনশন ভালো। প্রবলেম হচ্ছে অভিজ্ঞতা, প্রবলেম হচ্ছে ভিশনের।

তারা সবাই ইনডিভিজুয়ালি এডুকেটেড, তারা ভালো লেখাপড়া জানে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু গ্যাপটা ওই জায়গায়- আমার দেশের মানুষ কী চায়, কোনটাতে তারা অভ্যস্ত- ওই জায়গাটাতে তাদের গ্যাপ আছে। ওরা আরবান শহরে ইয়াং জেনারেশন দ্বারা প্রভাবিত, আপনারা যেটাকে ‘জেন জি’ বলেন। কিন্তু রুরাল বাংলাদেশি হিউজ, এদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কতটুকু; তারা তাদের কতটুকু চিনে, কতটুকু বোঝে? গ্রামের একজন কৃষকের চিন্তাটা কি সেটা তারা কতটুকু বোঝে? এসব মিলেই তো একটা রাজনৈতিক ভাবনা তৈরি হয়।

বাম রাজনীতি করার সময় আমার ওপর নির্দেশনা এলো- তুমি ডাকসু ইলেকশন করবা। আমি বললাম- না আমি ডাকসু ইলেকশন করব না। জিজ্ঞেস করল, তুমি তাহলে কী করবা? বললাম, গ্রামে গিয়ে কাজ করতে চাই। বলা হলো তুমি চলে যাও পঞ্চগড়ে, ওখানে জোহা ভাই নামে আমাদের একজন পুরোনো কমিউনিস্ট নেতা কাজ করছে তার সঙ্গে কাজ কর। শুরুটা এভাবেই, মানুষের সঙ্গে থেকে তাদের বুঝিয়ে কাজ করা। আমার ফরমাল লাইফে যে পলিটিক্সে আসা, সেটাও মেয়র রাজনীতি থেকে। আমি পৌরসভা মেয়রের ইলেকশন করেছি। আমি সেখানে স্বতন্ত্র ইলেকশন করেছি, কোনো দলবাজি করিনি। আমি একজন সুইপারের ঘরে গিয়েছি, আমাদের ওখানে ওঁরাও-সাঁওতাল আছে তাদের কাছে গিয়েছি; আমাদের গরিব যে কৃষক আছে সেখানে গিয়েছি, তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি কিন্তু সেখান থেকে শিখেছি। ওইযে জিনিসগুলো শিখেছি সেগুলো এখনো কাজ করে আমার মধ্যে। এরপর যখন পার্লামেন্টে এসেছি তখন চেষ্টা করেছি এগুলো কীভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যায়। যখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি তখন চেষ্টা করেছি কীভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করা যায়। সময় কম পেয়েছি, তবুও চেষ্টা করেছি। এ বিষয়গুলো এখনো আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। একজন প্রকৃত রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া এ রকম। নতুন দলের নেতারা তো এভাবে গড়ে ওঠেনি, তাই তাদের কিছুটা গ্যাপ থাকাটাই স্বাভাবিক।

খোলা কাগজ : গত সরকারের শাসনামল দীর্ঘ, প্রায় সাড়ে ১৬ বছর। এ সময় বিএনপি ক্ষমতার বাইরে ছিল। স্বাভাবিক রাজনীতি করতে প্রতি মুহূর্তে পড়তে হয়েছে প্রতিবন্ধকতার মুখে। শিকার হতে হয়েছে জেল-জুলুমসহ নানা অত্যাচারের। এই প্রতিকূল সময়ে বিএনপিকে সামনে থেকে আপনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনার নেতৃত্বের অর্জন কী?

মির্জা ফখরুল : এ সময়টা আসলে আমি খুব ‘ক্রাইসিস পিরিয়ড’ পার করেছি। আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলখানায়, আরেক নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে। দলের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রবণতা ছিল। সেই প্রবণতাগুলোকে ওভারকাম করে আমি দলটাকে ধরে রেখেছি। আপনারা যদি এখন আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার অর্জন কী, সফলতা কোথায়? আমি বলব- নানা প্রবণতার মাঝেও আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি। দলের অভ্যন্তরে বা বাইরে থেকে অনেক চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু আমি সেটা সাকসেস হতে দেইনি। পাশাপাশি আমি একটা আন্দোলনের সূচনা করেছি। আপনারা ২৩-এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত দেখেছেন মানুষ কিন্তু উঠে এসেছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো আমরা সাকসেস হতে পারিনি; তবে মানুষকে জাগ্রত করতে পেরেছি। আমি মনে করি এই বিষয়গুলো গণঅভ্যুত্থানের ব্যাপারে বড় ভূমিকা পালন করেছে। বলা হয়ে থাকে এ ধরনের অভ্যুত্থানের ভিত্তি যখন তৈরি হয়ে যায় তখন শুধু একটা ‘স্পার্ক’ (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ) প্রয়োজন হয়। কোটা আন্দোলন কিন্তু সেই স্পার্কটাই করেছে। আবু সাঈদের হত্যা আর ওয়াসিমের হত্যায় সারা দেশে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ এত অপকর্ম করেছে যে, সর্বস্তরের মানুষ একটা পরিবর্তন চেয়েছে।

খোলা কাগজ : বর্তমান সময়ে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান বিষয় দুটি নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ দাবি করছে দুটো একই জিনিস, আবার কেউ কেউ বলছে একাত্তরের সঙ্গে চব্বিশের তুলনা চলে না। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল : একাত্তরের সঙ্গে চব্বিশকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না, দুটো আলাদা জিনিস। একাত্তর হচ্ছে আমার স্বাধীনতার যুদ্ধ, একটা ভূখণ্ডের যুদ্ধ। একাত্তর হচ্ছে আমার পরিচিতি স্বাতন্ত্র্যের যুদ্ধ। আর চব্বিশ হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। দ্য ডিফারেন্ট ইজ দেয়ার, দুটোকে এক করা যাবে না।

খোলা কাগজ : জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দেখা গেছে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী দখলবাজি এবং চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছেন। এরই মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনেককেই দল বহিষ্কারও করেছে। কিন্তু তারপরও থামছে না এসব অপকর্ম। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল : পৃথিবীর ইতিহাসে যখনই কোনো পরিবর্তন হয়েছে তখনই এ রকম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আপনি দেখেন, গত ১৬ বছর কিন্তু আমাদের লোকেরা সাফার করেছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট সব দখল হয়ে গেছে। অনেকেই দীর্ঘদিন নিজেদের বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি। এখন সময় এসেছে তাই তার আগে দখল হওয়া জিনিসটাই সে ফেরত নিচ্ছে, এখন যেটাকে আপনারা দখল বলছেন সেটা আসলে দখল নয়। তবে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে ঘটছে না তা-ও কিন্তু অস্বীকার করছি না। এ রকম অভিযোগ পেলেই আমরা দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিএনপি একটি আদর্শভিত্তিক দল। আমরা কোনো ধরনের অপরাধ বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেই না। দলের গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা সব সময়ই সতর্ক। দোষী ব্যক্তির পরিচয় বড় নয়- অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

খোলা কাগজ : বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে দল দুটি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। অনেকেই বলছে, এটা দল দুটির রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। এ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মির্জা ফখরুল : আমি জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বলব না। আপনারা জানেন জামায়াতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক ছিল সেটা নির্বাচনি অ্যালায়েন্স। জামায়াতের রাজনীতি আর আমাদের রাজনীতি এক নয়- এটা মনে রাখতে হবে। এবং আমাদের সব সময় বেকায়দায় ফেলানো হয়েছে জামায়াতকে আর আমাদের এক করে। আমরা ওই ট্যাগ থেকে বের হওয়ার জন্য জোট ভেঙে দিয়েছি। তারপর যুগপৎ আন্দোলন করেছি। আমরা বাম-ডান প্রায় ৪২টা দল মিলে যুগপৎ আন্দোলন করেছি, জামায়াত করেছে তাদের মতো করে। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা শুধুই নির্বাচনকালীন- এটাই বাস্তবতা।

খোলা কাগজ : ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।

মির্জা ফখরুল : ধন্যবাদ আপনাকেও। দেশবাসীর কাছে একটাই অনুরোধ- গণতন্ত্র রক্ষায় সবাই সচেতন হোন, সাহস রাখুন।

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   বিশেষ সাক্ষাৎকার   খোলা কাগজ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কুমিল্লায় কেএফসির আউটলেটে হামলা ও ভাঙচুর
সিলেটে কেএফসি-বাটা-ইউনিমার্টে হামলা ও ভাঙচুর
নীরবতা ভাঙুন, গাজার পক্ষে দাঁড়ান
পহেলা বৈশাখে শাক-ভর্তা খাওয়ার পরামর্শ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার
ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ও দেশি পণ্যের ব্যবহার প্রচারে লিফলেট বিতরণ

সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে ছেলে-মেয়ের হাতে বাবা খুন
গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে চবির ফ্রিল্যান্সারদের ফাইভার বয়কট
গাজায় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
জাতীয় নির্বাচনে নিষিদ্ধ হচ্ছে পোস্টার

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close