আজ শুরু হতে যাচ্ছে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। এতে যোগ দেবেন ৪০ দেশের কয়েকশ বিনিয়োগকারী। চার দিন সেমিনার, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বেঠক এবং বিমানে করে কারখানা পরিদর্শনে যাবেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পেলে স্বাক্ষর হবে সমঝোতা স্মারক। এ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিনিয়োগ আকর্ষণে তার কারিশমা দেখাবেন। 

বিনিয়োগের খরা কাটাবে এ সম্মেলন 

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও শিল্প কারখানায় সংঘাতের পর বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের দুয়ার খুলতে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল চারদিনব্যাপী রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।

সামিটের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লবপরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরাও এ সামিটের লক্ষ্য।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন গতকাল বলেছেন, বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এ নাসার সঙ্গে চুক্তি হবে। 

আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। চার দিনব্যাপী সম্মেলনে আয়োজক বাংলাদেশসহ অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে পাঁচ শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেবেন। আগামী ৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। সম্মেলন অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়া কর্নার থাকবে।

বৈচিত্র্যে সাজানো হয়েছে ৪ দিনের সম্মেলন 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইয়ে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা। যারা যাচ্ছেন তারা হলেন সেসব উদ্যোক্তা, যারা মনে করছেন তাদের সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারি, তা তারা সরেজমিন দেখবেন।

অন্যদিকে আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি সেটজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন, তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারা দিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীদের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে, সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও’র সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ৯ এপ্রিল বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়া সারা দিনই একাধিক (তিন-চারটা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। একইসঙ্গে কয়েকজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। সেখান থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করব, আর কী করলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য বেটার ডেস্টিনেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

সম্মাননা পুরস্কার পাচ্ছেন ৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। যাদের সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) সংশ্লিষ্ট এক সংস্থা এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য একটি কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বছরের পর বছর কাজ করছেন এমন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা পুরস্কারের পাশাপাশি অনারারি সিটিজেনশিপ অফার করা হবে।

আসন্ন বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বিদেশি বড় বড় বিনিয়োগকারী যারা আসবেন (চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে) তাদের সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

চমক দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ 

দির্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ঘাটতিতে ভুগছে। ড. ইউনূসের একটা বৈশ্বিক পরিচিতি আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে থাকায় তিনি আমন্ত্রণ জানালে পৃথিবীর সেরা বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হতে পারেন। সে জায়গা থেকে এ বিনিয়োগ সম্মেলন একটা আশা জাগাচ্ছে। হয়তো বিশ্বের নামকরা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তারা তড়ি ভেড়াতে পারেন। 

কেকে/এআর