মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাজিরবাজারে প্রমত্তা মনু নদীর ওপর একটি সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় ২২ হাজার মানুষ। বর্ষায় উত্তাল নদীতে নৌকায় পারাপার এবং শুষ্ক মৌসুমে সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাজিরবাজার এলাকায় মনু নদীর ওপর এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁশের সাঁকোই ভরসা। এ সাঁকো দিয়েই কাজিরবাজার, মিরপুর, আমুয়া, পালপুর, ইসলামপুর, শেওয়াইজুড়ী, চানপুর, মনুমুখ, কালিয়া, ওয়াপদা, বেঁকামুড়া, দক্ষিণ বেঁকামুড়া, পশ্চিম বেঁকামুড়া সহ ১৫টি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত পারাপার করছেন। সাঁকোটি এতটাই সরু যে একসঙ্গে কয়েকজন উঠলে দুলতে থাকে এবং মাঝে মাঝে ভেঙেও পড়ে। কয়েক বছর আগে এমন এক ঘটনায় কয়েকজন আহত হন। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য এ সাঁকো পার হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে সেতুর দাবিতে আবেদন জানানো হলেও কেউ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেননি। ফলে যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন এবং চিকিৎসাসেবা নিতে পারাপার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পালপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রী নিবাস দাস জানান, কাজিরবাজার আপ্তাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় হলো ওই এলাকার একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী বাঁশের সাঁকো পার হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে।
বেঁকামুড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুল হক পাল্লা বলেন, “শুধু শিক্ষার্থী না, কৃষক, ব্যবসায়ী, রোগী—সবার যাতায়াত এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে একটি সেতুর ব্যবস্থা না থাকায় আমরা শত বছরের পুরনো দুর্ভোগে আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক এবাদুল হক বলেন, কাজিরবাজারে মনু নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে কযেকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। যে কোনো সময় সাঁকো ভেঙে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এখানে।
দক্ষিণ বেঁকামুড়া গ্রামের চিনিলাল নমশুদ্র বলেন, তিনি সাঁকোর রক্ষণাবেক্ষণ করেন এবং খেয়া পারাপারের কাজ করেন। এর বিনিময়ে প্রতিবছর কিছু টাকা পান। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্থানীয়রা বলেন, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, চেয়ানম্যানসহ অনেক জনপ্রতিনিধি এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. বদরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রকৌশলী শাহেদ হোসেন বলেন, আমি এই সমস্যার বিষয়ে অবগত নই। তবে দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা আশাবাদী, দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করে তাদের যাতায়াতের ভোগান্তি দূর করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।
কেকে/এএম