সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলায় স্টল বরাদ্দে নিজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সামনে আসতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন প্রক্টর।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্টল বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত হারে টাকা জমা দেওয়ার কথা জানানো হয়।
প্রক্টর অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। আগ্রহী বিভাগ/প্রক্টর অফিস অনুমোদিত সংগঠনসমূহ ও অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রক্টর অফিস থেকে ফরম নিয়ে জমা দেওয়ার সময় নিচের ছক অনুযায়ী টাকা প্রক্টর অফিসের চলতি হিসাব নং-৩৪০০১১২৫-এ জমা দিতে হবে।
ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ এপ্রিল ২০২৫, বিকাল ৫টা পর্যন্ত। যেখানে স্টল বরাদ্দে বাহির ১ হাজার ৫০০ ও অভ্যন্তরীন ৫০০, ফুসকা/চটপটির দোকানিদের জন্য বাহির ১ হাজার ও অভ্যন্তরীন ৫০০, ফেরিওয়ালা/ঠেলাগাড়ি/আইসক্রিম দোকানের ক্ষেত্রে ২০০ এবং বুট, বাদাম, আমড়া, ঝালমুড়ি ইত্যাদি বাহির ও অভ্যন্তরীন ১০০টাকা জমা দিতে বলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন শিকড়ের সভাপতি নাফিউম আলম পূর্ণ জানান, একটি সংগঠনের মাধ্যমে জানতে পারি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে স্টল বরাদ্দে টাকা দিতে হবে। আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে প্রক্টর অফিসে গিয়ে বলি এর আগে স্টল বরাদ্দে কোনো টাকা লাগেনি। তখন প্রক্টর স্যার আমাদের জানান, গত কয়েক বছর ক্যাম্পাসে বৈশাখী মেলা হয়নি; আমরা ক্যাম্পাসে আসার আগে নাকি এটি চালু ছিল।
তিনি আরো জানান, আমরা বলি, ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলো নিজস্ব অর্থের কোনো উৎস নেয়, তারা কীভাবে এই টাকা দেবে। আলোচনা শেষে আমরা চলে আসি এবং পরবর্তীতে আমাদের জানানো হয়, ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলো স্টল বরাদ্দে কোনো টাকা দিতে হবে না।
মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদের সভাপতি সাদিয়া আনজুম শৌমি বলেন, প্রক্টর অফিস থেকে বিজ্ঞপ্তি আসার পর আমরা বিস্তারিত জানতে সেখানে যাই। আমাদের সঙ্গে থিয়েটার সাস্ট ও শিকড়ের সদস্যরাও ছিলেন। আমরা জানাই আমাদের সংগঠন প্রক্টর অফিস অনুমোদিত এবং পূর্বে কখনো স্টল বরাদ্দে টাকা দিতে হয়নি।
তিনি বলেন, প্রক্টর স্যার আমাদের জানান সর্বশেষ বৈশাখী মেলায় ক্যাম্পাসে স্টল দিতে টাকা নেওয়া হয়েছিল। তবে ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলো এর আওতায় পড়বে কিনা, সে বিষয়ে স্যারের কিছুটা কনফিউশান ছিল। পরে তিনি অফিসকে বিষয়টি খোঁজ নিতে বলেন এবং পরবর্তীতে আমাদের জানানো হয়, আমাদের স্টল বরাদ্দে কোনো টাকা দিতে হবে না।
এদিকে প্রক্টর অফিসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করা পোস্টে আমির হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, আমাদের থেকে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য প্রতি সেমিস্টারে একটা ফিস নেওয়া হয়, আবার সেই অনুষ্ঠানে স্টল দিতে আমাদের থেকে আবার টাকা নেওয়া হচ্ছে। আবার ইউনিয়ন ফিস নামে একটা টাকা নেওয়া হয়, রোভার স্কাউটের জন্য টাকা নেওয়া হয়, ক্যালেন্ডারের জন্য টাকা নেওয়া হয়, যে সব সার্ভিসের তো কোনো খোঁজ নাই।
এবি শাহাদাৎ নামে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, শাবিপ্রবির ৭ বছরে এমন উদ্ভব নোটিশ দেখি নাই। স্টলের জন্য শুধু একটা অ্যাপ্লিকেশন দিলেই হতো। এ দেখি গ্রাম্য মেলার মতো ইজারা দিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তির বিষয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, অভ্যন্তরীন ও বাহির দুইটি বিষয়। অভ্যন্তরীন বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে ভেতরে যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের জন্য প্রয়োজ্য, এখানে শিক্ষার্থীরা আওতাভুক্ত নয়। আমাকে যে বিজ্ঞপ্তিটা দেওয়া হয়েছে সেটা আগের ফরমেট। বিষয়টি আমার কনসার্নে আসার পর আমি শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লিয়ার করেছি এবং ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য স্টল বরাদ্দের টাকা মওকুফ করেছি।
আগে টাকা নেওয়া হতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কি হতো সেগুলো সম্পর্কে আমি অবগত নয়। আমি দায়িত্ব আসার পর এটা প্রথম। ক্যাম্পাসের সংগঠন বা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি উদ্যোগে হোক স্টল বরাদ্দে কাউকে টাকা দিতে হবে না। আগামীকাল অফিস খুললে নতুন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
কেকে/এএম