চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌডালায় বাবা ও ৬ বছরের মেয়েকে অপহরণ করে নির্যাতনের দায়ে অপহরণকৃত যুবকের আপন ভাই ও চাচাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গোমস্তাপুর আমলী আদালতের বিচারক সারমিন খাতুন তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গ্রেফতারকৃত দুই ব্যক্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বসনীটোলা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে মো. ফয়েজ রহমান (৫০) ও একই গ্রামের মৃত হাজী দানেস উদ্দিনের ছেলে মো. নেফাউর রহমান (৬০)। তারা সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা।
মামলার প্রধান আসামি ফয়েজ রহমানের আপন ছোট ভাই মো. ফয়সাল রহমান সোহেল (৪০) ও ভাতিজি মোসা. ফামিয়া খাতুনকে (৬) অপহরণ করে নির্যাতনের মামলায় তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মামলার বাদি অপহরনের শিকার ফয়সাল রহমান সোহেলের সাবেক স্ত্রী সায়লা সারমিন শোভা। গত ২৮ আগষ্ট গোমস্তাপুর থানায় তাদের দুজনকে আসামি করে মেয়ে ও সাবেক স্বামী অপহরণ ও নির্যাতনের মামলা করেন তিনি।
মামলার নথি, বাদি, আইনজীবী, অপহরনের শিকার ভুক্তভোগী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ আগষ্ট রাতে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন লোক বসনীটোলা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ফয়সাল রহমান সোহেলকে তুলে নিয়ে যায়। পর দিন সকালে ৬ বছরের ফামিয়া খাতুনকে তার নানা বাড়ি থেকে স্কুলে প্রোগ্রামে তার বাবা নিয়ে যেতে বলেছে জানিয়ে সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসেন নেফাউর রহমান। ঘটনার চার দিন নিখোঁজ ছিল বাবা ফয়সাল রহমান সোহেল ও তার মেয়ে ফামিয়া।
এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি শুরু করলেও বাবা-মেয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর ২৩ আগস্ট ফয়সাল রহমান সোহেলের ছোট চাচা পারভেজ স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাবা-মেয়ের নিখোঁজের বিষয়টি মুসল্লিদের অবহিত করেন।
এর প্রেক্ষিতে মসজিদেই ফয়সাল রহমান সোহেলের আরেক চাচা নেফাউর রহমান জানান, তার কিছুই হয়নি, সে ভালো আছে, বর্তমানে রিহ্যাব সেন্টারে আছে। কিন্তু এরপরে পরিবার ফয়সাল রহমান সোহেলের পরিবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সন্ধান পায়নি।
মামলার বাদি সায়লা সারমিন শোভা জানান, সাবেক স্বামী ও ৬ বছরের মেয়েকে অপহরণ করে নির্যাতন করেছিল ফয়েজ রহমান ও নেফাউর রহমান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাবা-মেয়েকে অপহরণ নির্যাতন করে ফয়সাল রহমান সোহেলের সকল সম্পত্তি দখল করা। কোনো সন্ধান না পেয়ে বাধ্য হয়েই থানায় মামলা করেছিলাম। আশা করি, আদালতের মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার পাব।
অপহরণের শিকার ফয়সাল রহমান সোহেল বলেন, আমার সম্পত্তি দখল করতেই আপন ভাই ও চাচা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। শুধু আমাকে নয়, আমার ৬ বছরের মেয়েকেও অপহরণ করে তারা। বৃহস্পতিবার বিকালে চার্জশিটে আসামীদের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পেলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমি বিশ্বাস করি, আমি এই অপরাধের বিচার পাব।
অপহরণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। বাদির আইনজীবী আব্দুল্লাহ আহমেদ নাজিব বলেন, বৃহস্পতিবার আদালত আসামিদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামিরা চার্জশিট দাখিল পর্যন্ত জামিনে ছিল। চার্জশিটে আদালত আসামিদের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে মনে করে এই নির্দেশ প্রদান করেন।
কেকে/এএম