আদালত কর্তৃক প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড রায় প্রদানের পর মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের মধ্যে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে। রায় বাস্তবায়নে শিক্ষকেরা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের ফুল দিয়ে বরণের পাশাপাশি দেন-দরবার করছেন।
অপরদিকে, সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার মূল তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দেশের সকল জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা।
মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিকসহ সকল শিক্ষককে একাডেমিক পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। এ ছাড়া, প্রধান শিক্ষককে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) প্রদানসহ সহকারী শিক্ষকদের এসিআর এ প্রতিস্বাক্ষর করেন। প্রধান শিক্ষক পদ দশম গ্রেড হওয়ায় স্কুলিং কার্যক্রম এখন কিভাবে বাস্তবায়ন হবে বা সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রধান শিক্ষকগণ মেনে নিবেন কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবাযনের ওপর। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি সমগ্রেড হওয়ায় মাঠ প্রশাসনে এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। গত ২ দশক ধরে এটিইওরা তাদের পদটিকে ৯ম গ্রেড করার দাবি করে আসলেও কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে আসছে। তাই এবার ৯ম গ্রেড বাস্তবায়নে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন সারা দেশে স্মারকলিপি প্রদানসহ কর্মসূচির কথা বলছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সকল উপজেলায় ২৬০৭টি এটিইও পদের বিপরীতে বর্তমানে ১ হাজার ৮শ সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্মরত আছেন। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ পরিসরে মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নসহ সরকারের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসনকে বিভিন্ন কাজে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা সহযোগিতা করে আসছেন। এ ছাড়া, অতিদরিদ্রদের মাঝে ভিজিডির চাল, টিসিবি, কর্মসিজন কর্মসূচিসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি, বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (স্লিপ), রুটিন মেনটেন্যান্স, ক্ষুদ্র মেরামত, ভবন ও ওয়াশব্লক নির্মাণকাজ তদারকিসহ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ), এপিএসসি বাস্তবায়নে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা কাজ করেন।
১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পিটিআই এর ইন্সট্রাক্টর পদটি ৩য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও পিটিআইয়ের সুপার পদটি ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ট গ্রেড, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর পদটি প্রকল্প থেকে ৯ম গ্রেড রাজস্ব খাতে, প্রধান শিক্ষকদের ১৬ গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১৮তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও পিএসসি কর্তৃক রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটির গ্রেড উন্নয়ন হয়নি। অথচ এটিইও পদটি ১৯৯৪ সাল থেকে অদ্যাবধি ২য় শ্রেণিতে রয়েছে।
এ ছাড়া দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তা কাক্সিক্ষত পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত থাকায় দাপ্তরিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে পদ মর্যাদাগত বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার ৯ম গ্রেড না পাওয়ায় কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারেরা। তাই, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড রায় প্রদানের পর নিজেদের মর্যাদা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সাথে ৯ম গ্রেড বাস্তবায়নে দেন দরবারের পাশাপাশি মামলাসহ কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। কর্মসূচির বিষয়ে ইতোমধ্যে সারা দেশের সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের নিয়ে এসোসিয়েশন সম্প্রতি জুম মিটিং করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করেছেন।
বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির রায় অবশ্যই ইতিবাচক। তবে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ তাদের মনিটরিং-মেন্টরিং ও কন্ট্রোলিং কর্মকর্তা হওয়ায় আমাদের সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত করা এখন সময়ের দাবি। এরই মধ্যে আমরা দেশের সকল জেলায় ডিসিদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আশা করছি আমাদের দাবি পূরণ হবে।
কেকে/এআর