ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা এখন যেন চলাচলের দুর্ভোগের আরেক নাম ‘টিউমার সড়ক’। কারণ, বারোবাড়িয়া থেকে আরিচা পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্থানে পিচ সরে গিয়ে সড়কটি হয়ে উঠেছে অসমতল, কোথাও গর্ত আবার কোথাও দেবে গিয়ে সৃষ্টি করেছে প্রাণঘাতী ঝুঁকি।
প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে গড়ে ১০ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। সরকারি ছুটি ও উৎসবের সময় আরো চাপ বাড়ে। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ রুটের বেহাল দশা জনজীবনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ডেকে আনছে।
স্থানীয় চালক ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে চলাচলকারী অতিরিক্ত ওজন বহনকারী মাটিবাহী ট্রাক ও ডাম্পারগুলোর জন্যই সড়কের এই দুরবস্থা। এসব ভারী যানবাহনের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক। অথচ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না প্রশাসনের।
সড়কের অবস্থা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- দ্বিতীয় গোলড়া মোড়, জাগীর পুলিশ ক্যাম্প, তরা সেতুর পশ্চিম পাশ, বানিয়াজুড়ি, পুখুরিয়া, জোকা, ফলসেটিয়া থেকে টেপড়া, বোয়ালিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এবং আরিচা বাসস্ট্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সড়ক দেবে গিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত। আবার অনেক স্থানে টিউমারের মত উচু অবস্থায় রয়েছে, কিছু জায়গা গাড়ি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এবিষয়ে বাসচালক হোসেন আলী বলেন, এই রাস্তায় যাত্রীরা নিজেরাই বিরক্ত হয়ে ওঠেন। চলাচলে মহাসড়কে কোথাও উচু, কোথাও নিচু। আমরা তো প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাই।
মোটরসাইকেল আরোহী শাহীদুজ্জামান বলেন, এই রাস্তার কিছু কিছু স্থানে এখন টিউমারের মতো ফুলে গেছে। একটু অসতর্ক হলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ট্রাকচালক শামছুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে মালামাল পরিবহন করি। কিন্তু এখন রাতে এই রাস্তায় চলা মানে জীবন নিয়ে বাজি ধরা। লোডেড ট্রাকগুলো সামান্য দুললেই উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে।
আরেক চালক আজগর বলেন, রাতে মাটির ট্রাকগুলো দাপিয়ে চলে। অথচ আমাদের ওপর কড়া নজরদারি চলে। মূল সমস্যা হল, কোন অজানা কারনে এইসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল কাদের জিলানী জানান, গোলড়া থেকে উথলী পর্যন্ত ১৮ কিমি সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। জুলাইয়ের মধ্যেই পুরো সমস্যার সমাধান করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বাথুলীতে এক্সেল লোড স্টেশনটি ৫ আগস্টের পর দুর্বৃত্তদের হামলায় ভেঙে যায়। ফলে ওভারলোডেড গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াসমিন খাতুন জানান, এই রুটে চলা অবৈধ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, সড়ক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত জরিমানা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেকে/ এমএস