রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১১ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয় ‘উগ্র বাম কমিউনিস্টদের’ ভোট দিতে      আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন: আবদুল কাইয়ূম      পাহাড় খেকোদের ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরের অনিহা       ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা      বাধ্যতামূলক অবসরে চার ডিআইজি      ভারতে বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান      বাধ্যতামূলক হচ্ছে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল      
জাতীয়
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সব কাজ বৈধ’, মেয়াদ অনির্দিষ্ট: জারি হচ্ছে অধ্যাদেশ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:২৩ পিএম  (ভিজিটর : ১৪২)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কিত একটি অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয়নি। খসড়ায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত না হওয়া এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করা পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় বহাল থাকবে।

আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ জানান, এই সরকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশের খসড়াটি সমস্ত বিবেচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন এবং দেশে ফিরে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হবে।

খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সরকারের কোনো কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না, এমনকি একে অবৈধও ঘোষণা করতে পারবে না। পাশাপাশি, এ বিষয়ে কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া চালানো যাবে না।

খসড়াটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নামে পরিচিত এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। বর্তমানে এটি গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের পর গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে যান। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় এবং তার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। 

এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি। সংবিধানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া আবশ্যক, যদিও বিশেষ পরিস্থিতিতে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। বিএনপি প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে ছিল, তবে এখন দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ এবং অধ্যাদেশ সম্পর্কিত খসড়ায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সব সিদ্ধান্ত আইনানুযায়ী বৈধ গণ্য হবে এবং এর কোনো বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও কার্যধারা সম্পর্কে খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সরকারের গঠনে কোনো ত্রুটি থাকলেও তা কোনো কার্যক্রম অবৈধ করবে না। এছাড়া, সরকার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে পারবে। প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা তাদের পদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা পাবেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারবেন।

খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণে তাদের দেশের নাগরিকত্ব, বয়স, এবং বিচারিক মাপকাঠির কথা বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বৈধভাবে কাজ করবে এবং সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় দায়িত্ব পালন করবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয় এবং বিলুপ্ত করা হয়। 

সব কাজ ‘বৈধ’, আদালতে যাওয়ারও সুযোগ নেই

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমের বৈধতা’ বিষয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান এবং আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, সেই তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়োগ করা ক্ষমতা, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, কর্মকাণ্ড ও গৃহীত ব্যবস্থা আইনানুযায়ী যথাযথভাবে করা এবং গ্রহণ হয়েছে বলে গণ্য হবে। সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে এর বৈধতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না বা একে অবৈধ বা বাতিল করতে পারবে না।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও কার্যধারা রক্ষণ’ সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে- অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বা এর প্রধান উপদেষ্টা বা কোনো উপদেষ্টাদের নিয়োগ সম্পর্কে কোনো ত্রুটি রয়েছে, কেবল এ কারণে কোনো কাজ অবৈধ হবে না বা এ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলা করা যাবে না।

প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ, প্রধান উপদেষ্টা পরামর্শ গ্রহণ, সরকারের মেয়াদ ও পদমর্যাদার বিষয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে।

>> একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং তিনি যতজন উপদেষ্টা নির্ধারণ করবেন সে সংখ্যায় উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।

>> প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাকে শপথ করাবেন রাষ্ট্রপতি।

>> অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।

>> প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

>> রাষ্ট্রপতির কাছে নিজে লেখা ও স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পদত্যাগ করতে পারবেন।

>> পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন।

>> প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ গ্রহণের বিষয়ে হয়েছে, বিদ্যমান অন্যান্য আইনে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতি কাজ করবেন। জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার আগে তাকে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিস্বাক্ষর নিতে হবে।

মেয়াদ কত?

এই বিষয়টি সুনির্দিষ্ট না করে সরকারের মেয়াদ বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করার তারিখ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার বহাল থাকবে।

এই সরকার একটি ‘অস্থায়ী বা সাময়িক’ সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলেও এতে উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, “সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় সরকার কাজ করবে।”

নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং সংবিধান বা অন্য কোনো আইন দিয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য ও সহায়তা দেবে।

প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা নিয়োগে অযোগ্যতা

>> দেশের নাগরিক না হন এবং তার বয়স ২৫ বছর পূর্ণ না হয়; কোনো আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা হন; দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন; কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।

>> নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলেও এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যাবে না।

>> বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২ এর অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে এবং

>> ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না’- এ বিষয়ে সম্মত না হন।

আগের অন্তর্বর্তীকালীন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার

তিন দশকেরও বেশি সময় আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা এসেছিল দেশে।

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার।

পরে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন হয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মেয়াদ ছিল ৯০ দিন।

তবে সবশেষ ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকে প্রায় দুই বছর।

২০১১ সালে এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই বছরের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নবম সংসদ।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  অন্তর্বর্তী সরকার   সব কাজ বৈধ   মেয়াদ অনির্দিষ্ট   অধ্যাদেশ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বীরগঞ্জে আন্দোলনের মুখে আলু সংরক্ষণ হিমাগার সীলগালা
বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয় ‘উগ্র বাম কমিউনিস্টদের’ ভোট দিতে
দনিয়া কলেজে নবীন বরণ, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন: আবদুল কাইয়ূম
মহানবি (স.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ডোমারে বিক্ষোভ মিছিল

সর্বাধিক পঠিত

বিদ্যালয়ে না গিয়েও সুবিধা ভোগের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে
ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মীর নেওয়াজ
টঙ্গীতে আ.লীগের নেত্রীসহ পাঁচজন গ্রেফতার
পাহাড় খেকোদের ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরের অনিহা
বোরো চাষে পানির মহা সংকটে কুষ্টিয়ার লক্ষাধিক কৃষক

জাতীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝