চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় শামীমা সুলতানা রুবি (২০) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী মো. মাসুম সরকার (৩০) কে আটক করেছিল থানা পুলিশ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ, যুবলীগ নেতা মনির বেপারী ওরফে সমিল মনির, দুর্গাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফ মজুমদারের মাধ্যমে গৃহবধূ শামীমা সুলতানা রুবির আত্মীয়দের সঙ্গে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফার পর থানা থেকে ছাড়িয়ে নিলেন স্বামী মো. মাসুম সরকারকে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকালে আবার তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হলে রুবি আক্তার বলেন আমাকে বেশি জ্বালা যন্ত্রণা করলে আমি আত্মহত্যা করব। তখন তার স্বামী মাসুম বলে তুই আত্মহত্যা করলে আমার কিছুই যাবে আসবে না। এ অপমান সইতে না পেরে স্বামীর সামনেই নিষিদ্ধ বিষাক্ত কেরির ট্যাবলেট খেয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান স্ত্রী।
দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরে রুবিকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মতলব উত্তর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. হাসিবুল ইসলাম জানান, শামীমা সুলতানা রুবি নামে রোববার রাত ১১টার দিকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, শামীমা সুলতানা রুবি খুবই শান্ত প্রকৃতির লোক ছিল। তার স্বামী বদমেজাজি ছিল। বিদেশ থেকে বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে বহুবার ঝগড়া বিবাদ করেছে। রুবির মৃত্যুর পর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে ৭ লক্ষ টাকা রফাদফা করেন।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. মাসুম সরকার ও শামীমা সুলতানা রুবির গত ২ বছর আগে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কয়েকমাস পর মো. মাসুম সরকার প্রবাসে চলে যায়। বিবাহের পরই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা হয়নি। প্রবাসে গিয়ে স্ত্রী রুবির সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করেননি মাসুম সরকার। প্রবাস থেকে মাসুম সরকার বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বা জিজ্ঞাসা না করেই দালান নির্মাণের কাজ শুরু করে।
তখন স্ত্রী রুবি আক্তার বলেন বিল্ডিং বেশি বড় না করে ছোট করতে। এতে অনেক টাকা কম লাগবে ও লোন নিতে হবে না। তারপর আবারো তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়েই স্ত্রী রুবিকে মারধর করেন মাসুম। পরে রুবি রাগকরে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে বের হলে নিশ্চন্তপুর বাজার থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন স্বামী মাসুম।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক জানান, বিষয়টি জানার পর পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মেয়ের পরিবার অথবা কেউ এ বিষয়ে মামলা করেনি, তাই আটক মো. মাসুম সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
কেকে/এএস