গ্রামীণ এক নারী মেঝেতে বসে নিজ হাতে শীতলপাটি বুনছেন। পাশেই চলছে গরুদৌড় প্রতিযোগিতা। তার পাশে কিছু মানুষ হাডুডু খেলছে। আরেকটু দূরেই সাঁকো পার হচ্ছে কয়েকজন কিশোর। সাইকেলের চাকা দিয়ে খেলা করছেন আরেকজন। এযেন কয়েক দশক আগের গ্রাম-বাংলার হুবহু উপস্থাপন। দৃশ্যটি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত একটি স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনীর।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২ ফুট প্রস্থের এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
'গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যমালা' শীর্ষক এক দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন রাবির চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান (হীরা সোবাহান)।
বাংলাদেশে এর আগে এত বড় স্ক্রিলচিত্র কখনোই প্রদর্শিত হয়নি বলে জানান অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান। সোমবার বেলা সাড়ে এগাররোটার দিকে দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ্ হাসান নকীব। পরে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন তিনি।
এ সময় উপাচার্য বলেন, শিল্পী অধ্যাপক আব্দুস সোবাহানের এই সৃষ্টিকর্ম দেখে খুবই ভালো লাগল। কয়েক দশক আগেও যেসব জিনিস আমরা দেখতে পেতাম, অথচ এখন সচরাচর দেখা যায় না— এমন অনেকগুলো বিষয় তিনি তার শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন। শিল্পকর্মগুলো আমাকে আমার শৈশব ও আগেকার দিনের গ্রামীণ সমাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এভাবেই নিজেদের অতীত ইতিহাসকে সংরক্ষণ করতে পারি আমরা।
নিজের এই একক প্রদর্শনীর বিষয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান বলেন, আমরা চারুশিল্পীরা রঙ ও তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাস রাঙিয়ে তুলি। যেখানে ফুটে উঠে আমাদের প্রকৃতি, আমাদের গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্য এবং লোকজ সংস্কৃতি। একজন চারুশিল্পী হিসেবে আমিও এসব বিয়বস্তকে নিয়ে ক্যানভাস পরিতলে দুইমাসের প্রচেষ্টায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২ ফুট প্রস্থের (মিশ্রমাধ্যম) একটি স্ক্রলচিত্র অঙ্কন করেছি।
তিনি আরো বলেন, স্ক্রলচিত্রটিতে স্থান পেয়েছে দেশের গ্রাম-বাংলার হারানো লোকজ-ঐতিহ্য। বিভিন্ন উৎসব (বাংলা নববর্ষ, নবান্ন, পৌষসংক্রান্তি), কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, লোকমেলা, লোকসংগীত, লোকসাহিত্য, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শৈশব, মাছধরা, প্রাত্যহিক ব্যবহৃত বিষয়বস্তু ইত্যাদি। আমার জানা মতে, ৩০০×২ ফিট দৈর্ঘ্যের পেইন্টিং বাংলাদেশে ইতোপূর্বে প্রদর্শিত হয়নি।
কেকে/এআর/এএম