লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার পাটগ্রাম পৌরসভার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কর বাবদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আদায়কৃত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত আত্মসাৎ হওয়া অর্থের দায় নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও পৌর কর্তৃপক্ষ।
সোনালী ব্যাংক পাটগ্রাম শাখা থেকে উত্তোলন করে পৌর করের এ টাকাকে আত্মসাৎ করল তার সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি হাসপাতাল ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকট পাটগ্রাম পৌরসভার করের চার লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা ৩৯১ নম্বর ট্রেজারি টোকেনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়।
কিন্তু পরে ওই টাকা পৌরসভার ফান্ডে জমা করা হয়নি। টাকাটা ব্যাংক থেকে কে উত্তোলন করেছেন তারও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল এবং পৌর কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলছে না।
প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে প্রায় ১০ বছর আগের ওই ঘটনা কি ধামাচাপা পড়ে যাবে?
সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ করের ওই টাকা অনাদায়ী থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলে ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: দেবব্রত বলেন, বিষয়টি জানতে চেয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস আমাদেরকে চিঠি দিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, বিষয়টি যেহেতু প্রায় ১০ বছর আগের, তাই এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদী এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আপনি মেডিক্যাল যান। তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবে। আমরা আপনাকে কোনো তথ্য দিতে পারছি না।'
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকা পৌর ফান্ডে জমা হয়েছে কি না, জানতে চেয়ে প্রায় এক মাস আগে পৌরসভায় চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে ওই টাকা পৌর ফান্ডে জমা হয়নি বলে তাদেরকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, করের টাকা জমা না হওয়ার বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রেজারিকে জানানো হয়। পরে ট্রেজারি কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারি মাসে ওই টোকেন নম্বরে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকা পৌর ফান্ডে জমা না করার বিষয়টি নিশ্চিত করলে ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে।
আত্মসাতের ঘটনা হিসাবরক্ষণ অফিস, পৌরসভা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চালাচালি হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কায় কোনো কর্মকর্তাই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে নারাজ।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দায়িত্ব পালন করা সাবেক পৌর মেয়র শমসের আলী বলেন, পৌরকর আদায় করেন কর আদায়কারী মোবারক হোসেন এবং ফান্ডে জমা করেন ক্যাশিয়ার শৈলেন। বিষয়টি তারাই দেখভাল করেন। অফিস অডিট হলেও তারাই সম্পর্ণ করান। ফলে বিষয়টি তারাই বলতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, তবে বিষয়টি এমন হতে পারে, তারা মেয়রকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে হ্যান্ডক্যাশ তুলে পৌর ফান্ডে জমা করেনি। এটা হলে আমার জানার কথা নয়।
এ বিষয়ে পৌর কর আদায়কারী মোবারক হোসেনের সাথে তার অফিসে কথা বললে তিনি কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
সরে-জমিন গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক জিল্লুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে জমার স্লিপ ও কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসও পৌর সভার অ্যাকাউনটেন্টকে বলা হয়েছে। তারা আমাকে এখনো কিছু জানায়নি।
কেকে/এআর