নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সিভিক এবং ডিজিটাল স্পেসকে নিরাপদ, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, গবেষক ও আইনবিদরা। তাঁদের মতে, এই দুটি স্পেস ক্রমাগতভাবে সংকুচিত হচ্ছে, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘সেইফগার্ডিং ভয়েস: সিভিক ও ডিজিটাল স্পেস শক্তিশালীকরণের কৌশল’ শীর্ষক একটি দিনব্যাপী কর্মশালায় এই অভিমত তুলে ধরা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে ভয়েসেস ফর ইন্টারঅ্যাকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)।
কর্মশালায় অংশ নেন সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা, আইনজীবী, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা। অংশগ্রহণকারীরা একটি প্রণীত জাতীয় কৌশলপত্র পর্যালোচনা করেন, যেখানে সিভিক এবং ডিজিটাল স্পেসকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করার বিভিন্ন সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য (জেন্ডার ডিসইনফরমেশন) এবং ডিজিটাল হুমকি, বিশেষ করে ডিপফেইক প্রযুক্তি ও অনলাইন হয়রানি প্রসঙ্গে।
অ্যাকটিভিস্ট ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘আমাদের সমাজ এখনও নাগরিক পরিসরে লিঙ্গভিত্তিক বিভ্রান্তিকর তথ্য বা অপপ্রচারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না। এই শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচলিত আইন ও নীতিমালার সংস্কার প্রয়োজন, যেন তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।’
ভয়েস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মুশাররাত মাহেরা বলেন, ‘নাগরিক ও ডিজিটাল পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। এই অবস্থায় সিভিল সোসাইটিকে এমন আইন প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, যা মানুষের কণ্ঠকে রোধ করে না, বরং অধিকার ও ডিজিটাল মর্যাদাকে সমর্থন করে।’
ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘গবেষণা, অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা, আইনি বিশ্লেষণ ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি এই কৌশলপত্রে দেখানো হয়েছে কীভাবে ভিন্নমত দমনে আইনের অপপ্রয়োগ হয় এবং কিভাবে আমরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও প্রযুক্তিনির্ভর হুমকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি।’
কর্মশালার অন্যতম আলোচক, আইসিএনএল-এর আইনি পরামর্শক শারমিন খান বলেন, ‘মানবাধিকার সংরক্ষণে আমাদের আইনি কাঠামোতে আরো মানবিকতা, অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, ‘ডিজিটাল স্পেসে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের চাই প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা, আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং ভুক্তভোগীদের প্রতিকারের পথ সুগম করা।’
এঙ্গেজ মিডিয়া থেকে রেজওয়ান ইসলাম বলেন, ‘যুব সমাজ, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন জনগণের কণ্ঠস্বর অব্যাহত থাকে এবং তারা ভয়হীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারেন।’
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আর্টিকেল ১৯, মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, নিজেরা করি, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নন-প্রফিট ল, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), এঙ্গেজ মিডিয়া, স্পার্ক ও সাঙ্গাত।
আলোচকরা বলেন, এই জাতীয় কৌশলপত্র হবে ভবিষ্যতে মানবাধিকার সংরক্ষণ, নীতিনির্ধারণ ও অ্যাডভোকেসির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই কেবল একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ডিজিটাল এবং সিভিক স্পেস গড়ে তোলা সম্ভব।
কেকে/ এমএস