জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অননুমোদিত মাতৃছায়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনকালে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোডের মাতৃছায়া হাসপাতালে অপারেশনটি করা হয়েছিল। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে তড়িঘড়ি করে মা ও নবজাতকের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
মৃত্যুবরণকারী নারী আল্পনা আক্তার (২২) সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ি গ্রামের মাটিকাটা শ্রমিক উজ্জল মণ্ডলের স্ত্রী।
সিজারিয়ান অপারেশনকারী গাইনি সার্জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরিমানা হিসেবে ব্যাংকের একটি চেক ওই নারীর স্বামীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন ঘটনা ধামাচাপা দিতে।
মৃত্যুবরণকারী আল্পনা আক্তারের শ্বশুর আব্দুল মান্নান মণ্ডল জানান, এক সন্তানের জননী আল্পনা আক্তার ইতোপূর্বে কিডনিতে পাথর হওয়ায় জেলা শহরের একটি ক্লিনিকে অপারেশন করান। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো তিনি সন্তানসম্ভবা হন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে প্রসবব্যথা উঠলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোডের মাতৃছায়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কম খরচে সিজার করিয়ে দেওয়ার প্রলোভনে শাবনুর নামে এক দালাল রোগীকে তার স্বামীর সঙ্গে মাতৃছায়া হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ি থেকে একজন গাইনি সার্জন এনে কোনোপ্রকার পরীক্ষানিরীক্ষা ও অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ ছাড়াই একই ব্যক্তি অজ্ঞান এবং অপারেশন সম্পন্ন করেন। অপারেশনকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়। কিছুক্ষণ পর প্রসূতির অবস্থাও অবনতি হলে ময়মনসিংহ স্থানান্তর করলে পথিমধ্যে তিনিও মারা যান।
অভিযোগ রয়েছে, আল্পনা আক্তারের পরিবারকে ম্যানেজ ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওইদিন রাতেই জরিমানা হিসেবে ব্যাংকের একটি চেক তুলে দিয়েছে হাসপাতালের মালিক। শুক্রবার সকালে তড়িঘড়ি করে মা ও নবজাতকের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ইতঃপূর্বেও একই হাসপাতালে সিজারের সময় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকলেও মাতৃছায়া হাসপাতালে অবৈধভাবে অপারেশন থিয়েটার বসানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সরিষাবাড়ী মাতৃছায়া হাসপাতালের সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম তারার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখানে তেমন কোনো অপারেশনই হয় না, হলেও মাঝে-মধ্যে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন রয়েছে, আরো একটি লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কিন্তু মাতৃছায়া হাসপাতালের লাইসেন্স বা অপারেশনের কোনো অনুমোদন নেই। অননুমোদিত অপারেশন কিংবা অবহেলাজনিত কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
কেকে/এমআই