মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ জমি দুই এবং তিন ফসলি। কৃষি অর্থনীতির বড় অংশজুড়েই জেলার প্রভাব রয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে কৃষিজমিগুলো গিলে খাচ্ছে আবাসন, ইটভাটা, কলকারখানা, সড়ক, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা। জেলাজুড়েই ফসলি জমি ভরাট করে বানানো হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ অন্যান্য স্থাপনা। আবার কৃষিজমি নিধন করে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ।
কৃষিজমি রক্ষায় আইন ও সরকারি বিধিবিধান থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র নির্মাণ হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পুকুর-ফিসারি। এতে কমছে আবাদযোগ্য কৃষি জমি ও ফসল উৎপাদন। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে কৃষকদের ওপরও।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি খনন করে পুকুর, ফিসারি, আর ভরাট করে ভিটাবাড়ি, ইটভাটা, ফিসারি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গত ৫ বছরে মৌলভীবাজার জেলায় ৬২২ একর কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯ সালে এ জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৩১ একর। ২০২৪ সালে তা কমে হয় ৪ লাখ ২২ হাজার ৮ একর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পযর্ন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলাসহ হাকালুকি, হাইল, কেওলার হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জমি ভরাটের মহোৎসব দেখা গেছে।
কয়েক বছর আগেও যেসব জমিতে ফসল হতো, সেসব এখন ভরাট হয়ে গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহর থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়কের পাশে জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতঘর ও দোকানপাট। এমনকি হাওরের জমিও ভরাট করা হচ্ছে। এতে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম বা ভূমি সুরক্ষা আইন। ফলে দিন দিন কমছে ফসলের জমি। এ ছাড়া জমির উপরের স্তরের মাটি কেটে বিক্রি করছেন জমির মালিকেরা। এতে করে জমির উর্বরতা শক্তি যেমন কমছে, অন্যদিকে এই মাটি দিয়ে কৃষিজমিতে ভিটা ভরাট করা হচ্ছে। ফলে দুদিক থেকেই ফসল উৎপাদনের ক্ষতি হচ্ছে। আর্থিকভাবে সাময়িক লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দুই-তিন মৌসুমে ধান রোপণ করা হয়। কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির উপরের স্তরের মাটি কিনে নিচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্তহচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, দিন যত যাচ্ছে জেলায় ততই কৃষিজমি খনন করে পুকুর, ফিসারি, ভরাট করে দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মৌলভীবাজারে ৬২২ একর কৃষি জমি কমেছে। এভাবে জমি কমলে হুমকিতে পড়বে ফসল উৎপাদন। দেশে কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হলে কৃষি জমি করা যেতো বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
কেকে/ এমএস