শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫,
৬ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: ফ্যাসিবাদীদের বিদায় হয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো যায়নি: জামায়াত আমির      রাষ্ট্রের গুণগত মৌলিক পরিবর্তনে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে: নাহিদ      হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশের আবেদন      পেঁয়াজে পুরনো সিন্ডিকেট      রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক নিহত      অনিয়মে নিমজ্জিত মেঘনা গ্রুপ      যুক্তরাষ্ট্রদোহী আন্দোলনে ভিসা বাতিল হওয়া অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী      
খোলাকাগজ স্পেশাল
টালমাটাল নিত্যপণ্যের বাজার
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৪৬ এএম  (ভিজিটর : ১৪২)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

রমজান মাসজুড়ে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই চড়া হতে শুরু করে সবজিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের বাজার। ঈদের আগের তুলনায় অর্থাৎ প্রায় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কমবেশি বেড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকার আশপাশে, যা আগের তুলনায় প্রায় ৪০ টাকা বেশি। সংকট রয়েছে সয়াবিন তেলের বাজারেও। 

এ ছাড়া দেশের কোথাও চালের সংকট না থাকলেও বাজারে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বাড়ছেই। তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম জাতভেদে ২০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ, আবার কিছু কিছু কেবল উঠতে শুরু করেছে যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে আর ক্রেতাদের দাবি, সিন্ডিকেট করে পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

হঠাৎ করেই চড়া সবজির বাজার : সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে রাজধানীর মালিবাগ এলাকার সবজি বিক্রেতা রিপন মিয়া বলেন, মূলত এখন বেশ কিছু সবজির মৌসুম শেষ, এ ছাড়া কিছু কিছু সবজি কেবল উঠতে শুরু করেছে যে কারণে বাজারে সবজি সরবরাহ তুলনামূলক কম। কিছুদিনের মধ্যে নতুন করে আবার সবজি উঠতে শুরু করবে তখন সবজির দাম আবার কমে আসবে। 

রাজধানীর রামপুরা বাজারের ক্রেতা রাকিব হোসেন বলেন, দাম বেশি কারণে আজ আধা কেজি করে সবজি কিনলাম। দাম যখন আবার কমবে তখন ১ কেজি করে সবজি নেব। আজকের বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। মূলত ঈদের পর থেকেই সবজির দাম বাজারে বেশি। ঈদের আগে পুরো রমজান মাসজুড়ে সবজি কিনা খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে সাধারণ ক্রেতারা। কিন্তু এখন আবার দাম বেড়ে যাচ্ছে এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের অস্বস্তি শুরু হচ্ছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, রমজান মাসজুড়ে সবজির দাম কম থাকলেও ঢেঁড়স, পোটল, করলা এ ধরনের সবজির দাম বেশি ছিল। 

তবে এখন এগুলো সবজির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। মূলত শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে ফলে ওইসব সবজির সরবরাহ বাজারে তুলনামূলক অনেক কম। এ ছাড়া কিছু কিছু সবজির মৌসুম কেবল শুরু করছে। পরিপূর্ণভাবে এসব সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে এগুলোর দামও কমে যাবে। মূলত ঈদের সময় বাজারে সবজি সরবরাহের গ্যাপ সৃষ্টি হয়, সেকারণেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা : হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

তারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের এখন ভরা মৌসুম। কিন্তু হঠাৎ করেই আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তাই পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় সব থেকে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। ফরিদপুরের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আড়তদারদের কথায় যা বোঝা যাচ্ছে সামনে দাম আরো বাড়বে। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ধান উৎপাদন হয় এমন চারটি জেলায় অতিবৃষ্টিতে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ কারণে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের উৎপাদন কম হয়। এ অজুহাতে অনেকে বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছেন। তবে বাজারে চালের সংকট নেই। কারণ খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩১ টন। আর বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৭ টন চাল। এ ছাড়া সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ প্রায় ৫ লাখ টন। 

গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ভেদে হালি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা। গত শুক্রবারও বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা ছিল। কিছু কিছু ব্যবসায়ী বাছাই করা ভালো পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করছিলেন। এখন সেই পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

মালিবাগ হাজীপাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করা মো. মানিক মিয়া বলেন, তিন দিন আগে আমরা হালি পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু গত দুই দিন ধরে পাইকারিতে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গত বুধবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজ (গতকাল) পাইকারিতে যে দামে কিনেছি তাতে ৬৫ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই। 

এ ব্যবসায়ী বলেন, আড়তে গেলেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আজ (গতকাল) তো আড়তে গিয়ে শুনলাম ফরিদপুরেই নাকি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা হয়ে গেছে। তার মানে ঢাকায় পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে। কারণ ঢাকায় এখন সব থেকে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। ফরিদপুরে দাম বাড়লে ঢাকায় দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। 

রামপুরায় পেঁয়াজ বিক্রি করা আল আমিন বলেন, হঠাৎ করেই আড়তে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। গত দুই দিনে আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকার ওপরে বেড়েছে। পাইকারিতে দাম বাড়ায় আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। কারণ বেশি দামে কিনে তো আর কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না। 
শান্তিনগর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা সুলাইমান হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা করে কিনেছে। গতকাল ৬৫ টাকা কেজি চাচ্ছে। কয়দিনে পেঁয়াজার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেলো। বিক্রেতারা বলছেন পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে, তাই তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। 

আমদানি বন্ধের ‘অজুহাতে’ বেড়েছে চালের দাম : দেশের বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে শুল্কমুক্তভাবে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। এ কারণে গত কয়েক দিনে এ বন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি হয়। তবে গত মঙ্গলবার থেকে চাল আমদানি বন্ধ হওয়ার খবরে হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। এদিকে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

হিলি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৬৯ টাকা কেজি দরে, যা গত দুদিন আগে ছিল ৬৪-৬৫ টাকা কেজি। আর স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকা কেজি, যা কয়েক দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৪৯ টাকা কেজি। 

অটোরিকশাচালক আসলাম হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে ৪৮ টাকা কেজিতে চাল কিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চাল নিতে এসে শুনছি দাম বেড়েছে। দাম বাড়িয়ে গরিবের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। 

চাল ব্যবসায়ী সামসুল মিয়া বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসা করি। কয়েক দিন ধরে ভারতীয় অনেক চাল বাংলাদেশ আমদানি হয়েছে। এসব চালের বেশিরভাগ খুচরা বাজারে বিক্রি না করে মজুত করা হয়। ফলে চালের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আমরা কম দামে কিনলে কমদামে বিক্রি করি। আর বেশি দামে নিলে বেশি দামে বিক্রি করি। 

হিলি বন্দরের চাল আমদানিকারক নুরুল ইসলাম বলেন, চাল আমদানি বন্ধ হওয়ায় দামটা একটু বেড়ে গেছে। তবে আর কয়েক দিন আমদানির সময় বাড়ানো হতো তাহলে দাম স্বাভাবিক থাকত। 

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি স্বাভাবিক ছিল। আমদানিকারকরা যাতে দ্রুত বাজারজাত করতে পারেন সে লক্ষে আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত ছাড়করণ করা হয়। কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টন।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সাংবাদিকের হাত-পা ভাঙ্গার আসামিদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
ফ্যাসিবাদীদের বিদায় হয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো যায়নি: জামায়াত আমির
সিমেবি'র ভিসিকে বেতনবঞ্চিতদের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম
রেলের ধাক্কায় রাউজানে আহত দন্ত চিকিৎসকের মৃত্যু
গজারিয়ায় শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সর্বাধিক পঠিত

প্রভাবশালীরা গিলে খাচ্ছেন হাওরের জমি, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
ফতুল্লায় যুবককে গুলি করে হত্যায় প্রধান আসামী বাবু গ্রেফতার
স্কুলে শিক্ষক থাকলেও, শিক্ষার্থী কেবল কাগজে-কলমে
বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে
টঙ্গীতে দুই শিশুকে জবাই করে হত্যা
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close