রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫,
৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই: মির্জা ফখরুল      উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস-প্রেস সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ      প্রতীক্ষা শেষে বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ      রাত ১টার মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে      বাজে হারে অনিশ্চয়তায় টাইগ্রেসদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন       আগামী নির্বাচন ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা       ফ্যাসিবাদীদের বিদায় হয়েছে, ফ্যাসিবাদ এখনো যায়নি: জামায়াত আমির      
খোলাকাগজ স্পেশাল
পেঁয়াজে পুরনো সিন্ডিকেট
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:১০ এএম  (ভিজিটর : ১১৯)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে গত চার-পাঁচ দিনে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকা। 

এবার মৌসুমে বেশ কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও এখন চড়া। পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। এরপর কিছুটা বেড়ে ঈদের পরও ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৬০-৭০ টাকায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। একই চিত্র রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ প্রায় সবখানে। 

যাত্রাবাড়ীতে পেঁয়াজ কিনতে আসা রুমন মিয়া বলেন, এক লাফে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ঈদের আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পাওয়া যেত। এখন সেই পেঁয়াজ ৭০ টাকা। দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাকিব হোসেন নামে এক ভোক্তা বলেন, একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। সরকারের উচিত এসবের লাগাম টেনে ধরা। 

এদিকে, পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পেঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। এরপর কিছুটা বেড়ে ঈদের পরও ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৬০-৬৫ টাকায়। 

রামপুরা বাজারের বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, ঈদের পর প্রায় প্রতিদিন পাইকারি বাজারে একটু একটু করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সব হিসাবে নিলে, গত দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বেড়েছে। এখন পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। 

একদল ব্যক্তি বা কম্পানি সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পরস্পরের স্বার্থ সুরক্ষায় একত্রে কাজ করে সিন্ডিকেট তৈরি করে। ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে এ দেশের জনসাধারণ নিত্যপণ্য ক্রয়ে উচ্চমূল্যের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যের জন্য ব্যবসায়ীদের রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের ফলে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে জনসাধারণ উচ্চমূল্যের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

তবে রাঘববোয়াল এবারো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পেঁয়াজ কারসাজিতে আগে যাদের নাম এসেছিল, তাদের শাস্তি হয়নি। গত দুই বছরে কারসাজির সঙ্গে অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় প্রশাসন। এমন অনেক সিন্ডিকেটে আছে খাতুনগঞ্জেও। এ ছাড়া বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ, ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগসাজশ আছে তাদেরও। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম-পরিচয়ও পাঠিয়েছিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কিন্তু কারো টিকিটিও ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। 

হঠাৎ দাম বাড়ার বিষয়ে হিলি বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। গত কয়েক মাস ধরে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। চলতি সপ্তাহে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। এর মূল কারণ সরবরাহ কম। যত দিন যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। এ ছাড়া নয়। 

তারা বলেন, মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। মোকামে বিক্রির জন্য কৃষকরা আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ আনতেন, তাতে পাঁচ ট্রাক হতো। এখন আসছে দুই ট্রাকের মতো। 

মুরগির দামে স্বস্তি, মাছের বাজারে অস্থিরতা: দেশের বিভিন্ন বাজারে মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মাছের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। বাজার সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি দুইশ টাকার নিচে নামলেও মাছের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

গতকাল সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এবং বনশ্রী এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাছ-মাংসের দামের এ চিত্র দেখা গেছে। ভোক্তারা বলছেন, গরু ও খাসির মাংস আগেই নাগালের বাইরে ছিল, এখন মাছের দামও বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে পড়তে হচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে- কোনটা কিনবেন আর কোনটা ছাড়বেন।

মাছের বাজারে অস্থিরতা: বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে দেশি জাতের মাছের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে চিংড়ি, শিং, টেংরা, শোল ও পুঁটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০-৮৫০ টাকা। চাষের চিংড়ির দামও বেড়ে হয়েছে ৬৫০-৭৫০ টাকা। টেংরা ও শিং মাছ ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে যা ছিল ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে। শোল মাছের দাম বেড়ে ৮৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০-৮০০ টাকা। রুই ও কাতলা মাছেও বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো সাধারণ মাছের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে- ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজারে স্বস্তি: অন্যদিকে মুরগির বাজারে তুলনামূলক স্বস্তি লক্ষ করা গেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। সোনালি মুরগি ২৫০-২৭০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে ২০-৩০ টাকা কম।

গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল, তবু নাগালের বাইরে: গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন না থাকলেও সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজিতে, খাসির মাংস ১,২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১, ১০০ টাকা। 

বাজার মনিটরিং জোরদারের আহ্বান ভোক্তাদের: মাছ কিনতে আসা চাকরিজীবী মইনুল হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে রুই মাছ ৩২০ টাকায় কিনেছি, গতকাল সেটাই ৩৭০-৩৮০ টাকায়। গরু-খাসির মাংস তো আগেই ছুঁয়ে দেখার বাইরে ছিল, এখন মাছও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।’ 

গৃহিণী সানজিদা হক বলেন, ‘মাছের দিকে ঝুঁকেছিলাম, এখন সেটাও হাতের বাইরে। সপ্তাহে একদিন মাছ খাওয়া হয়ত সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে।’

ভোক্তারা সরকারের প্রতি বাজার মনিটরিং জোরদার ও সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মাছ-মাংস-ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের দাম না কমলে সাধারণ মানুষের পুষ্টি ও জীবনযাত্রা দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিক্রেতারা কী বলছেন: রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদা রয়েছে, কিন্তু সরবরাহ নেই। উৎস এলাকা থেকে মাছ সংগ্রহের খরচ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।’ বনশ্রী বাজারের মুরগি বিক্রেতা মাহফুজ আলী বলেন, ‘ঈদের পর মানুষ আবার মুরগির দিকে ফিরছে। চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম একটু কমিয়ে বিক্রি করছি।’ 

রামপুরা বাজারের হাসান শেখ বলেন, ‘মাছের দাম দেখে অনেকেই আবার মুরগির দিকে ঝুঁকছে। এখন বাজারে অস্থিরতা কম।’ মাংস ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জানান, ‘দাম আগের মতোই আছে, তবে বিক্রি কিছুটা কম। মানুষ মাছ কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতাশ হয়ে মাংস কিনতে আসছে, কিন্তু এখানেও দাম শুনে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।’

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

‘অবশেষে নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল’
সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরের মধ্যে পুরুষ লেমুর উদ্ধার
মনোহরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক আটক ৩
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনের ধাক্কায় তরুণের মৃত্যু
ইমারত নির্মাণে ব্যত্যয় হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

সর্বাধিক পঠিত

ভাতিজার সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত চাচী, হাতেনাতে ধরলো স্বামী
টঙ্গীতে দুই শিশু হত্যায় গ্রেফতার মা
মদনে ১২ বছরের মেয়ে ২ মাসের অন্ত:সত্ত্বা
চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল গঙ্গাচড়ায় নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন
সালথায় যুবকের লাশ উদ্ধার
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close