দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদপুরের মতলব উত্তর মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়কে গোপন সুড়ঙ্গ কেটে ও রাস্তার ওপর ড্রেজার পাইপ বসিয়েছে অসাধু বালি ব্যবসায়ীরা কোনো স্থানে রাতের আঁধারে আবার কোনো স্থানে দিন-দুপুরে বোরিং করে প্রকাশ্যে কাটছে সড়ক। এতে যেমন হুমকির মুখে পড়তে পারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ফসলি জমি, অন্যদিকে সড়ক ভেঙে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) গভীর রাতে ছেংগারচর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের জনৈক বালু ব্যবসায়ী মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধের সুগন্ধি এলাকায় রাস্তা কেটে তার নিচ দিয়ে ড্রেজার পাইপ লাইন স্থাপন করেন ৷
এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে সড়কের ওপর থেকে ড্রেজারের পাইপ অপসারণ অভিযান পরিচালনা করা হলেও কিছুদিন পর কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে পুনরায় শুরু করেন ড্রেজারের মাধ্যমে বালুর ব্যবসা৷
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের সুগন্ধি, জহিরাবাদ, এখলাছপুর, মোহনপুর, জনতাবাজার, দশানী, শিকিরচর, শিকিরচর বটতলা, ইমামপুর, কালিপুর পাম্পহাউস, বেলতলিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নজুড়ে বেড়িবাঁধ রাস্তার ওপর ও নিচ দিয়ে ড্রেজারের পাইপ লাইন টানা হয়েছে। রাস্তা দখল করে পাইপ লাইন নেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে কৃষিজমি ও রাস্তার ওপর পাইপ লাইন নিয়ে রমরমা ব্যবসা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা।
সড়ক ছাড়াও এ পাইপ নেওয়া হয়েছে ফসলি জমির ওপর দিয়ে পাকা ও কাচা রাস্তার মাটি কেটে নিচ ও ওপর দিয়ে নেওয়া হয়েছে ড্রেজারের পাইপ। এসব জায়গায় পাইপের ওপর মাটি ফেলে কয়েক ফুট উঁচু করা হয়েছে। এতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরকার প্রতিবছরই জনস্বার্থে রাস্তাঘাট উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরাতন রাস্তা মেরামত করছে ৷ আর সেই রাস্তা কেটে ড্রেজার পাইপ লাইন বসিয়ে ব্যবসা করে আসছে বালু খেকোরা৷ চলতি অর্থ বছরে মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধের প্রায় ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তার প্রস্তুতকরণ ও সংস্করণের কাজ হয়েছে এরই মাঝে।
এছাড়া কয়েকটি স্থানে রাস্তা কেটে পাইপ লাইন নেওয়ার কারণে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে ড্যামেজ হয়ে যে কোনো সময় রাস্তা দেবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে৷ তাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়া ও রাস্তা কাটার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ তারপরেও কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে অনুমতি ছাড়াই রাস্তা সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ স্থাপন করেন অবৈধ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীরা৷
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেকসই ও গুণগত মানের রাস্তা নির্মাণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি সরকারের পরামর্শ ও নির্দেশ রয়েছে আর সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কাজ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ৷ কিন্তু তাদের বাধাকে উপেক্ষা করে সড়ক কেটে ও গোপন সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ লাইন বসিয়ে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছে ড্রেজার মালিকরা ৷ সড়ক সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ বসানোয় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
তাদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ সড়কের এ অংশে ৬০ কিলোমিটারে রাস্তা কেটে নিচ দিয়ে নেওয়া হয়েছে ২০টির বেশি ড্রেজার পাইপ। এসব পাইপ দিন-দুপুরে অনুমোদন ছাড়াই পাইপ লাইন স্থাপন করেন ড্রেজার মালিকরা। প্রশাসন কর্তৃক মাঝে মধ্যে ড্রেজার পাইপ লাইন উচ্ছেদ করা হলেও কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে বার বার রাস্তা কেটে নিচ ও ওপর দিয়ে ড্রেজার পাইপ স্থাপন করছেন বালু ব্যবসায়ীরা ৷ এতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়কের যেমন ধস নামতে পারে তেমনই বাঁধের অধীনে থাকা লাখো পরিবারের নিরাপত্তাও পড়তে পারে হুমকিতে।
চাঁদপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়কের ওপর ড্রেজারের পাইপ লাইনের কারণে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় অন্যদিকে সড়ক কেটে গোপন সুড়ঙ্গ করে সড়কের নিচ দিয়ে পাইপ লাইন স্থাপনের কারণে সড়কের টেকসই গুণগত মান কমে যাওয়ার ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে তাই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়া ও রাস্তা কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ৷
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যারা সড়ক কেটে ও গোপন সুড়ঙ্গ করে ড্রেজার পাইপ লাইন স্থাপন অথবা যেকোনো কারণে রাস্তা খোড়া, রাস্তা কাটবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বিধিমোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সুড়ঙ্গ করে ও রাস্তার ওপরে অপরিকল্পিত অবৈধভাবে ড্রেজারে পাইপ বসানোর কোনো সুযোগ নেই। রাস্তার ওপরে বা রাস্তা কেটে ড্রেজারের পাইপ বসিয়ে কেউ যেন, যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। এরপরেও যদি কেউ করে তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএস