সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামে ২০ হাজার টাকায় নিজের সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক হতভাগী মায়ের বিরুদ্ধে। আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫) সন্তানের সুচিকিৎসা ও দুধ কিনতে না পেরে নবজাতক শিশু খাদিজা খাতুনকে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান।
রোবার ২০ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় জনৈক আফসার আলীর বাড়িতে ৫ম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনকে নিয়ে রাত যাপন করছিলেন বহু বিবাহের হোতা কাদাকাটি গ্রামের সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে শামীম হোসেন (২৮)।
শামীম পেশায় একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রি। আবার কখনো কাজ করে ইটভাটায়। স্বামীর ৫ম বিয়ের খবর শুনে শুক্রবার ভোরে খোঁজ নিতে ভালুকা চাঁদপুর চলে আসেন আশামনি খাতুন। সেখানে স্বামী ও ৫ম স্ত্রী হোসনে আরার সঙ্গে সাক্ষাৎ মেলে আশামনির। শুরু হয় শামীম ও আশামনির মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও মারামারি। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রীর মারামারি বন্ধ হলেও সুকৌশলে পালিয়ে যায় ৫ম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন।
আশামনি জানান, চলতি সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে স্থানীয় কুল্যার মোড়ে একটা ক্লিনিকে তিনি দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন। ক্লিনিকের খরচ, বাচ্চার ওষুধ ও দুধ কিনতে দিশেহারা হয়ে নিজের নবজাতক শিশু খাদিজাকে ১৪ দিন বয়সে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আশাশুনি তেঁতুলিয়া গ্রামের চা বিক্রেতা নিঃসন্তান রবিউল-কাজল দাম্পতির কাছে নগদ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
আশামনি বলেন-আমি এ কাজ করেছি আমার সন্তানকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। এ বিষয়ে চা বিক্রেতা রবিউলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কাজল বলেন, আমরা দরদাম করে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে শর্ত দিয়ে টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে কিনে নিয়েছি। বাচ্চার টিকা কার্ডে পিতা-মাতার নামের স্থানে আমার স্বামী ও আমার নাম দিয়েছি। জন্ম নিবন্ধন সনদে তার নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের পরিচয়ে পরিচিত হবে।
শামীম নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে আশাশুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পরে আর খোঁজ খবর নেইনি বলে জানায় সে।
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ সামছুল আরেফিনের বলেন, আমি চার দিন আগে আশাশুনি থানায় নতুন যোগদান করেছি। আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেখানে যায় সেখানেই বিয়ে করে শামীম। ২০১৬ সালে সে তালা উপজেলা লাউতাড়া গ্রামে সামাজিকভাবে বিবাহ করলেও সে বিয়ে টেকেনি। এরপর উপজেলার বদরতোলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে।
সে বিয়েও টেকেনি। পরবর্তী নিজের চাচাত বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করে। বিলকিসকে নিজ বাড়িতে রেখে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে শামীম আশামনিকে বিয়ে করে। পরে শামীমকে ডিভোর্স দিয়ে অন্যত্র চলে যায় বিলকিস। আশামনি জানায়, মোবাইলে শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো খোঁজখবর নেয়নি। আশামনি জানান, তার গর্ভে সন্তান থাকাকালীন বদরতোলায় আবারো টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে ছয় মাস আগে হোসেনে আরাকে বিয়ে করে শামীম।
কেকে/এএস