মো.জিহাদ।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। নওগাঁর এক প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা৷ অন্যের জমিতে কাজ করে বাবা কাদের আলী সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খায়। জিহাদ পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই বাজারে সবজি বিক্রি করে সংসারে সহায়তা করতেন। ২০২৩-২৪ সেশনে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থ সংকটের মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন কী না, তা নিয়ে ছিলেন চিন্তিত। ক্যাম্পাসে এসে শুরুতে টিউশনিও খুঁজে পাননি মনমতো। কিন্তু, কিছু তো একটা করতে হবে। এই কিছু একটা করার পরিকল্পনা থেকেই জিহাদ সিদ্ধান্ত নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে ফেরি করে চা বিক্রয় করার।
যেই ভাবা, সেই কাজ। তিনি এখন প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চবি স্টেশনে চা বিক্রি করেন। আর এই চা বিক্রির টাকা দিয়েই চালাচ্ছেন নিজের যাবতীয় খরচ।
স্টেশনে গেলেই চেয়ার-টেবিলের সাথে একটা ফ্লাক্স নিয়ে দেখা যাবে কর্মঠ জিহাদকে। তিনি নিজের চা স্টলের একটা ইন্টারেস্টিং নামও দিয়েছেন। নামটা হলো "মার্চেন্ট অব সিইউ"। চলুন জিহাদের মুখেই শোনা যাক ওনার সেই চা স্টলের গল্প।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. জিহাদ খোলা কাগজকে বলেন, "আর্থিক সংকটে থাকলেও আমি পড়াশোনা ঠিকমতো কন্টিনিউ করতে চাই। বাবার কাছে থেকে এই মুহূর্তে খরচ নেওয়া সম্ভব না। নিজের খরচ চালানোর জন্য কিছু একটা করা জরুরি ছিল। ঠিক করলাম ক্যাম্পাসের স্টেশনে চায়ের স্টল দিবো৷ কিন্তু, ফ্লাক্স আর টেবিল কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থও কাছে ছিল না। এই সময় চবির একটি সংগঠন বিআরএফ ইয়ুথ ক্লাবের পক্ষ থেকে আমাকে ফ্লাক্স আর টেবিল গিফট করা হয়।
ক্যাম্পাসে চায়ের স্টল চালাতে পারবো কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু, সহপাঠী এবং সিনিয়ররা আমাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন। কোনো কাজই ছোট না। হালাল উপার্জন সব সময়ই বরকতময়।আলহামদুলিল্লাহ, চা বিক্রির উপার্জন থেকেই আল্লাহ তায়ালা আমার খরচ মোটামুটিভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন।
জিহাদ বলেন,আমার স্টল থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক প্রচারণাও আমি চালাচ্ছি। তুলনামূলক কম খরচে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপ পাওয়া গেলেও আমি পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ ব্যবহার করছি৷ খরচ হালকা বেশি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমি এই কাজ করে আসছি। আপনারা আমাকে দোয়ায় রাখবেন, যেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে এই দেশের জন্য কিছু করার তাওফীক দান করেন।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিআরএফ ইয়ুথ ক্লাবের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর সফিউল্লাহ বলেন, "আমাদের কোনো একটা ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিতে গেলে পরিকল্পনা করতে করতেই কয়েক মাস চলে যায়। সেখানে জিহাদ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও ছোট্ট চা স্টল দিয়েই যে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।"
কেকে/এইচএস