রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) মো. নুরুল ইসলাম বলেছেন, যানজট ও জলাবদ্ধতা রাজধানী ঢাকার দুইটি প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে নাগরিক সচেতনতা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। সমন্বিত উদ্যোগ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুস্থ, পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব ঢাকা গড়ে তোলা সম্ভব।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার নাগরিক জীবনের নানা সংকট এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) মো. নুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে রাউকের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
মো. নুরুল ইসলাম বলেন, রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট, যা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই যানজটে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ কর্মঘণ্টা, বেড়ে চলেছে শব্দ ও বায়ু দূষণ, সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। ঢাকার জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তাঘাট ও গণপরিবহন অত্যন্ত অপ্রতুল। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যা, দুর্বল গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল সমস্যাকে দিন দিন আরও জটিল করে তুলছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ফুটপাত দখল, রিকশা ও বাসের এলোমেলো চলাচল, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির অভাব, বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা এবং মেট্রোরেল বা উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের কারণে অস্থায়ী সংকোচন ঢাকার যানজটকে অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
ঢাকার আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে উঠে আসে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর অনেক এলাকা পানিতে ডুবে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকার খালগুলো ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবকাঠামো, বন্ধ হয়ে গেছে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের পথ। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নালা-নর্দমায় ময়লার স্তূপ এবং বক্স কালভার্টে জমে থাকা অপচনশীল বর্জ্যের কারণে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা আজ নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
সমাধানের উপায় তুলে ধরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত ও আধুনিক করতে হবে, ব্যক্তি যানবাহনের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ট্রানজিট-ভিত্তিক উন্নয়ন (টিওডি) বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া কম দূরত্বে কমিউটার রেল চালু করা, আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও এলোমেলো পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখিত ৪৭টি খাল উদ্ধার ও সীমারেখা নির্ধারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধকরণ, নদী ও খালগুলোর নাব্যতা রক্ষা এবং স্কুল পর্যায় থেকে জনসচেতনতা গড়ার কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজউকের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান।
অন্যানের মধ্যে বক্তব্য দেন বিআইপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র-ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ। সংগঠনের সিনিয়র সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ।
কেকে/এজে