বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫,
১৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের লুকোচুরি       অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অভাব, গতি পাচ্ছে না কার্যক্রম      ৯ মাসেই ধূলিসাতের পথে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা      রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মৌলভিত্তি পরিবর্তন করা যাবে না       অভিনেতা সিদ্দিককে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ, ভিডিও ভাইরাল      বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ      আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
কী বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রণব আচার্য্য
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:২৯ এএম  (ভিজিটর : ১০৪)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচন নিয়ে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গত রোববার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, দেশের মানুষ তার সরকারকে সমর্থন করেন। তিনি আরো বলেন, দেশে মানুষ এখনো তার সরকারকে ভালো সমাধান মনে করে। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও। আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি। 

প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্যকে কেউ কেউ এ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার আকাক্সক্ষা হিসেবে দেখছেন। এতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর কর। 

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আলা-জাজিরাকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, সরকার জনগণের কথা বলে তাদের ক্ষমতাকে আরো প্রলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করতে চায় কিনা। এ প্রশ্নটা সবার মধ্যে বড় আকারে দেখা দিয়েছে। মানুষ যখন একটা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, রাজনৈতিক দলগুলো যখন দাবি করছে নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হবে, সরকারও যখন নানাভাবে বলছে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ভালো নির্বাচন উপহার দেবে- তখন প্রধান উপদেষ্টার এ কথার মধ্যে দিয়ে মানুষ অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছে। একটা আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে। তিনি যে জনগণের কথা বলছেন, এটা কীভাবে বোঝা যাবে। কোনো গণভোটের মধ্য দিয়ে কি এটা বোঝা গেছে? অথবা কোনো জনমত সমীক্ষায় বোঝা গেছে? 

কারা সরকারকে দীর্ঘায়িত করতে চায়- প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, এটা বোঝা যাচ্ছে, একটা অংশ যারা এ সরকারকে রাখতে চান, তাদের কোনো মতামতের প্রতিফলন হয়তো প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্য চলছে। সরকার কার্যত ভেঙে পড়েছে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে নৈরাজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে। সংস্কার এবং নির্বাচন একটা অনিশ্চিত আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যাবে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রধান উপদেষ্টা ভেবেচিন্তেই এ কথা বলেছেন একটা গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়ায়। সরকারের উচিত হবে তার অবস্থান সবার কাছে পরিষ্কার করা। 

জাতীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জনগণ ভোট চাইছে না, তা আপনি কীভাবে বুঝলেন? কোনো মহামানব এসেও ভোট ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। বিএনপিসহ প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে যে প্রতিশ্রুতি ও বক্তব্য দিয়েছেন, তার কোনো ব্যত্যয় হবে না।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিচার নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। মে মাসের শুরুতে বিচার শুরু হবে। ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। যদিও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি ভারত। 

সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটি কি বলা ঠিক যে শেখ হাসিনার পতনের পরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অন্যরা রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। যেমন- লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারে? জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দুটি বিষয়, একটি জনগণের অধৈর্য নিয়ে, তা মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক। 

অন্যদিকে রোহিঙ্গা একটি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি এবং এই লোকেরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছি। আমাদের চিন্তা হলো, কিভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া তৈরি করা যায়, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে এবং নিরাপদ পুনর্বাসন করতে পারে। 

সাক্ষাৎকারে বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস। 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কি না। তারা এখনো কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

তাহলে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কি না, সে প্রশ্ন সাক্ষাৎকারে উঠে আসে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, সেটা নয়। অন্যান্য দল আছে যারা বলতে পারে যে এই আইনের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান- শেখ হাসিনা দাবি করছেন, তিনি এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে বসে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার ভারতে তার উপস্থিতিকে কিভাবে দেখছে?

জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ছিলেন। মোদির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। মোদিকে স্পষ্টভাবে বলেছি, যখন তিনি (হাসিনা) সেখানে আছেন, তখন যেন কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য না দেন। কারণ এটি আমাদের দেশে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করছে। তিনি (হাসিনা) বাংলাদেশের মানুষকে উসকে দেওয়ার জন্য বক্তব্য দিচ্ছেন, আর তার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে।

সাংবাদিক জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী মোদি কী বলেছিলেন। উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি যদি ঠিকঠাক মনে করতে পারি, তিনি বলেছিলেন, এটি (ভারত) এমন একটি দেশ, যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত, আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি মনে করেন কি না, ভারত শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে, যেন দেশে ফিরে তাকে ন্যায়বিচারের সম্মুখীন না হতে হয়। তিনি ভারতের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন কি না? জবাবে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারত সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু তারা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখন আদালত তাকে নোটিশ পাঠাবেন এবং তখন দেখা যাবে কিভাবে তাকে ফিরিয়ে আনা যায়।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের লুকোচুরি
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষককে শাস্তি
অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অভাব, গতি পাচ্ছে না কার্যক্রম
গলায় ফাঁস দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা
৯ মাসেই ধূলিসাতের পথে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা

সর্বাধিক পঠিত

বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ
মর্টার শেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো গোটা গ্রাম
জুয়ায় আসক্ত ছেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলেন বাবা
কোম্পানীগঞ্জে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন
অবিলম্বে বিতর্কিত নারীবিষয়ক সুপারিশমালা বাতিল করতে হবে: আবদুল হালিম

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close