মাগুরার শালিখা উপজেলার যশোর-মাগুরা মহাসড়কের রামকান্তপুর থেকে শতখালী পর্যন্ত রাস্তার দুধার দিয়ে অসংখ্য খৈয়া গাছ। প্রতিদিন সকাল হলেই আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুরা এখানে আসে খৈয়া পাড়তে। সঙ্গে নিয়ে আসে লম্বা কুটা (বড় লাঠি আগায় ছোট্ট লাটি বাঁধা লগা) যা দিয়ে দিনভর খৈয়া পাড়ে তারা।
অনেকে আবার উঠে যায় গাছের বড় বড় মগডালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খৈয়া পেড়ে দুই থেকে তিনশ টাকা আয় করে তারা যার অনেকটাই ব্যয় করা হয় হাত খরচের জন্য সেখান থেকে কিছু টাকা অনেক শিশুই দেয় তার পরিবারের জন্য। শুধু শিশুরা নয় আশপাশের বড় মানুষও আসে এখানে সঙ্গে পথচারীদের অংশগ্রহণ তো আছেই।
খৈয়া বা খৈ বাবলা যার বৈজ্ঞানিক নাম Pithecellobium dulce এটি হচ্ছে Fabaceae পরিবারের Pithecellobium গণের একটি সপুষ্পক বৃক্ষ। এ গাছের দেহ সুন্দর পেঁচানো। গাছ কেটে ফেললেও এর গোড়া থেকে দ্রুত নতুন ডাল গজিয়ে যায়। চারটি উপপত্র পাতার গোড়ায় কাঁটা থাকে। পুরোনো পাতা ঝরে দ্রুত নতুন পাতা গজায়। পাতা দেখতে অনেকটা কাঞ্চনের পাতার মতো। এর ফল দেখতে জিলাপির মতো পেঁচানো।
ফলে ৫-১০ টি বীজ থাকে। পাকার পরে ফল ফেটে ভিতরে থেকে হলুদাভ সাদা মাংস বীজ বেরিয়ে পড়ে। এর ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামীণ শিশুরা গ্রীষ্মকালে এ ফল সংগ্রহ করে থাকে। খৈয়া গাছের ছাল আমাশয়, অবিরাম ডায়েরিয়া ও যক্ষ্মারোগের জন্য আনেক উপকারী। এর বীজ আলসারে আরাম দেয়। কফ নিঃসরণ ও পাতা পিত্তাশয়ের রোগে ব্যবহৃত হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুস্বাদু এই ফলটি পলিথিনের পুঁটলায় বেঁধে প্রতিটি পুঁটলা বিক্রি করছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা যা থেকে প্রতিদিন আয় হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকারও বেশি। দুপুরে মানুষের আনাগোনা একটু কম থাকলেও সকাল ও বিকালে চলে খৈয়া পাড়ার ধুম। শুক্রবার আসলেই ভিড় বাড়ে খৈয়াপ্রেমী মানুষের। বাণিজ্যিকভাবে এই ফলটি বিক্রি না হলেও প্রতিদিন তা বিক্রি করে নিজেদের হাত খরচের পাশাপাশি পরিবারের ভরণপোষণে সহযোগিতা করছেন অনেকেই। এমনই একজন কিশোর আহাদ মিয়া। তার সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, প্রতিদিন সকাল হলেই এখানে আসি খৈয়া পাড়তে। দিনভর দেড় থেকে দুই কেজি খৈয়া পাড়ি। পরে তা বিক্রি করে নিজের হাত খরচ চালায় পাশাপাশি বাবার হাতে ২০০ টাকা দেয়।
অপর একজন তামিম হাসান। তার সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, পাশের একটি ইটভাটাই কাজ করি সেখানে টাকা পয়সা তেমন পায় না তাই প্রতিদিন সকাল হলেই এখানে এসে খৈয়া পাড়ি। পরে তা বিক্রি করে যে ২০০ টাকা আয় হয় তা দিয়ে নিজের হাত খরচ চালায়।
আব্দুল ওহাব বিশ্বাস নামের এক পথচারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন এ পথে আমি স্কুলে যাই মাঝে মাঝে এখানে দাঁড়িয়ে শিশুদের কাছ থেকে কিছু ফল চেয়ে খাই। খৈয়া ফল খেতে অনেক ভালো লাগে।
রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা এই ফলের গাছটি যেমন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করছে অনুরূপভাবে ফল দানের মাধ্যমে পরিতৃপ্ত করছে মানুষসহ পশু-পাখিকে। সকাল হলে দেখা যায় খৈয়া গাছ থেকে খৈয়ার দানা পড়ে সাদা হয়ে গেছে রাস্তাসহ আশপাশের পুরো এলাকা।
কেকে/এএস