নাগরিকদের আদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য কোনভাবেই তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করা যাবে না। জরুরী অবস্থাতেও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মৌলভিত্তি পরিবর্তন না করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই অবান্তর। জুন মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সুরক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বে পার্টির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, মাহমুদ হোসেন, রাশিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম ও শেখ মোহাম্মদ শিমুল।
মতবিনিময় সভায় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বে কমিশনার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সংবিধান সংস্কারে এটা নিশ্চিত করা দরকার যে, রাষ্ট্র কোন নাগরিকের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিংগীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য নাগরিকদের মধ্যে কোন বৈষম্য করবে না। একইসঙ্গে এই সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের এমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে যা সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক কোন আইন, বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল, সংকুচিত বা স্থগিত রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, বিদ্যমান সামগ্রিক বিবেচনায় সংবিধান কতখানি গণতান্ত্রিক করা যায়, সংবিধান কীভাবে একটা বহুত্ববাদী সমাজে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারে, সরকারকে কিভাবে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক করা যাবে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে যৌক্তিক ও ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক নিশ্চিত করা যাবে- সংস্কারে এই দিকগুলোই মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, যে ব্যবস্থা একটি দল বা ব্যক্তিকে চরম কতৃত্ববাদী দুঃশাসনে পরিনত করে সেই ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের জন্যই সংবিধানসহ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে গনতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন।
ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে আলোচনার পর প্রেসব্রিফিংয়ে সাইফুল হক বলেন, আমরা রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছি। একইসাথে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সংবিধানের মূলনীতিমালার সাথে স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখিত— সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকেও যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনে প্রার্থীতার বয়স ২৫ রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে। একজন দুই মেয়াদের বেশী প্রধানমন্ত্রী না থাকা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করা এবং সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতার মেয়াদকাল চার বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রী পরিষদের এক নম্বর সদস্য বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদের যৌথ কর্তৃত্বের পক্ষে মত দিয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাইফুল হক সারা দেশে মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই অবান্তর।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে বাইরে রেখে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন, নির্বাচন কমিশনসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন, জরুরী অবস্থাতেও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে মত দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।
পার্টি নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে ও নারী বিরোধী তৎপরতা বন্ধে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
সাইফুল হক বলেন, নির্মম বৈষম্য বিলোপে কোন কমিশন হয়নি। প্রকট বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কারও আখেরে টেকসই হবে না।
চার ঘন্টা স্থায়ী এই সভায় কয়েকটি বিষয় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছে। কমিশনকেও তারা কয়েকটি বিষয় আরও চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন। মে মাসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কমিশনের সাথে আরও একবার মতিবিনিময় করার কথা জানিয়েছে।
কেকে/এজে