বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫,
১৭ বৈশাখ ১৪৩২
বাংলা English

বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের লুকোচুরি       অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অভাব, গতি পাচ্ছে না কার্যক্রম      ৯ মাসেই ধূলিসাতের পথে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা      রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মৌলভিত্তি পরিবর্তন করা যাবে না       অভিনেতা সিদ্দিককে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ, ভিডিও ভাইরাল      বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ      আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের লুকোচুরি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:১৩ এএম  (ভিজিটর : ৫৯)
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘একটি হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ বা মানবিক করিডরের’ বিষয়ে নীতিগত সম্মতির কথা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এমন সিদ্ধান্ত কারা, কোথায়, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কিসের ভিত্তিতে নিচ্ছে- সেই বিষয়ে বিভিন্ন মহলে থেকে প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে লুকোচুরির প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। 

এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে কি-না সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এবং একই সঙ্গে মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি ছাড়াও মিয়ানমারে প্রভাব আছে এমন আঞ্চলিক সব পক্ষ একমত না হলে প্রস্তাবিত করিডরটি বাংলাদেশের জন্য সামরিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কোনোরকম আলোচনা ছাড়া সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। 

গত রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য করিডর) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব। কিন্তু জাতিসংঘের প্রস্তাবে কী বলা হয়েছে, শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ কী চেয়েছে কিংবা সেই একই করিডর দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগ থাকবে কি-না এসব কিছুই সরকার প্রকাশ করেনি। 

এদিকে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে। তিনি বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না। তবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ। এই রুট ব্যবহার করে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদানে সম্মত রয়েছে। 

তবে শফিকুল আলম মানবিক করিডর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি দাবি করলেও, ভিন্ন কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, মানবিক চ্যানেল (প্রস্তাবিত করিডর) তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মিকে জাতিসংঘই আলোচনায় বসাচ্ছে। আর আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম এসেছিল। আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার সবার সঙ্গে আলোচনা করেই তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। 

মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ বলছেন, মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত হচ্ছে অথচ দেশের মানুষ, রাজনীতিক ও প্রশাসনের কেউ কিছু জানে না বলেই তারা তথ্য পাচ্ছেন। এসব সিদ্ধান্ত কোথায় হচ্ছে, শর্ত কী, কী হবে কেউ জানে না। সবাইকে অন্ধকারে রেখে এত বড় সিদ্ধান্তে ঝুঁকি থেকেই যাবে। কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক সব পক্ষ একমত হলেও এই করিডরে বাংলাদেশের স্বার্থ কোথায়? 

মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের কাছে মানবিক করিডর দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত সোমবার তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশকে একটা হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। সরকারের উচিত ছিল এ বিষয়টা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা। তারা এটা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডর) দিচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, জাতিগতভাবে মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। একে তো রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। আবার মানবিক করিডর দিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক- সেগুলো আলোচনা করে করিডর দেওয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ, এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তা বিষয় জড়িত থাকতে পারে।
 
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের একটি আকাক্সক্ষা হলো পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কোনো সরকার চাইলেই নিজেদের মতো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক দল ও জনমতের প্রতিফলন ঘটে এমন সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রাখাইনে করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব। 

প্রভাবশালী পশ্চিমা কয়েকটি দেশ দীর্ঘকাল ধরেই বাংলাদেশের কাছে এমন একটি করিডরের পরামর্শ বা প্রস্তাব দিয়ে আসলেও রাজনৈতিক সরকারগুলো ভূ-রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় তাতে কখনো সায় দেয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে যুদ্ধ চলমান যেসব জায়গায় মানবিক করিডর করা হয়েছে, সেগুলোকে শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র মানবিক করিডরে সীমাবদ্ধ রাখা যায়নি, বরং এর সঙ্গে সামরিক নানা বিষয় যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশ এখন রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য করিডর দিলেও তাতে আদৌ রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের লাভ হবে কি-না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ আরাকান আর্মির রসদ সরবরাহের অন্য পথ বন্ধ করে রেখেছে জান্তা সরকার।
 
আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয়ের অনুরোধ জাতিসংঘের

মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পালিয়ে আসা ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক অঙ্গসংস্থা ইউনাইটেড নেশনন্স রিফিউজি এজেন্সি (ইউএনএইচসিআর)। গত সোমবার এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।  

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত সরকারি সংস্থা রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিপ্যাট্রিশন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সেখানে মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশে আসা নতুন প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কেকে/  এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  মানবিক করিডর   জাতিসংঘ   রোহিঙ্গা   অন্তর্বর্তী সরকার   মিয়ানমার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের লুকোচুরি
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষককে শাস্তি
অভিজ্ঞ কর্মকর্তার অভাব, গতি পাচ্ছে না কার্যক্রম
গলায় ফাঁস দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা
৯ মাসেই ধূলিসাতের পথে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা

সর্বাধিক পঠিত

বিজিবির পা ধরে ক্ষমা চাইলো বিএসএফ
মর্টার শেল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো গোটা গ্রাম
জুয়ায় আসক্ত ছেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলেন বাবা
কোম্পানীগঞ্জে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন
অবিলম্বে বিতর্কিত নারীবিষয়ক সুপারিশমালা বাতিল করতে হবে: আবদুল হালিম

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close