দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভয়াবহ অবকাঠামোগত সংকটে চলছে পাঠদান। কোথাও ভবন পরিত্যক্ত, কোথাও নেই কোনো ভবনই—শুধু টিনশেড। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে।
উপজেলার আঙ্গারপাড়া, ভাবকী, ভেড়ভেড়ী ও গোয়ালডিহি ইউনিয়নে অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার বা নতুন ভবনের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবন এখন হুমকির মুখে।
শতবর্ষী বিদ্যালয়ে নেই স্থায়ী ভবন আঙ্গারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৩ সালে। দীর্ঘ ১১১ বছরেও এখানে নির্মিত হয়নি কোনো স্থায়ী ভবন। বিদ্যালয়টিতে এখন মাত্র দুটি টিনশেড ঘর ও একটি দুই কক্ষবিশিষ্ট ভবন দিয়ে পাঠদান চলছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৫ জন।
প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন, এত পুরোনো বিদ্যালয়ের এমন করুণ অবস্থা খুবই হতাশাজনক। প্রতিনিয়ত দুঃখ নিয়ে ক্লাস নিতে হয়।
পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের বেলপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে নির্মিত ভবনটি ২০১৯ সালে উপজেলা প্রকৌশলী সুবীর কুমার সরকার পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু এর পরেও সংস্কার বা নতুন ভবন হয়নি। বর্তমানে সেই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস চলছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথিয়া আক্তার জানায়, ‘ছাদ থেকে পানি পড়ে, বই ভিজে যায়। খুব ভয় লাগে, কিন্তু কী করব?
রড বেরিয়ে পড়েছে, দেয়ালে ফাটল গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পূর্ব নলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে নির্মিত ভবনটিতে এখন দেখা দিয়েছে ফাটল, কোথাও কোথাও বেরিয়ে পড়েছে রড। ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনের অবস্থা ভয়াবহ। ছাদ থেকে পানি পড়ে, দেয়ালে ফাটল—শিক্ষার্থীরা সব সময় আতঙ্কে থাকে।
জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক ভাবকী ইউনিয়নের কউগাঁও পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে নির্মিত ভবনটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়। ছাদে ফাটল, দেয়ালে চুন খসে পড়ছে।
প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, ভবন ভেঙে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা খুব অসহায়ভাবে ক্লাস নিচ্ছি।
অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয়দের একটাই দাবি দ্রুত এসব বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে, যাতে শিশুরা ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়গুলোর দুরবস্থার কথা আমাদের জানা আছে। আমি বিদ্যালয়গুলো নিজে পরিদর্শন করেছি, আমি কয়েক দিন হলো নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। আমি বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে আলোচনা করেছি, আমরা ৪টি বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠিয়েছি, আশা করি দ্রুত ফলাফল আসবে, এবং বিদ্যালয় ৪টির কাজ শুরু হবে।
কেকে/এএস