শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪,
২ কার্তিক ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম: এক হওয়ার আগেই বিচ্ছেদের পথে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক      ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে জামায়াত-শিবির: জয়      সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জনের মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি      সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভাঙার কাজ করছি: আসিফ মাহমুদ      ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু      ১২ টাকায় বিক্রি নিশ্চিতে দুই আড়তে দৈনিক ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে কর্পোরেট উৎপাদকরা      শতকোটি ব্যয়েও হয়নি মশা নিধন      
লাইফস্টাইল
ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স: ভয়াবহতা এবং প্রতিকার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪, ১০:০৮ এএম আপডেট: ২৬.০৯.২০২৪ ১১:১০ এএম  (ভিজিটর : ২৩)

মস্তিষ্ক আমাদের সব ধরনের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু রোগ আছে যা আমাদের মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করা থেকে বিরত রাখে। ডিমেনশিয়া হচ্ছে এমন একটি জটিল নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। এই রোগ হলে মানুষ ধীরে ধীরে তার স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে বিশ্ব জুড়ে ৫৫ মিলিয়ন মানুষ এই রোগ নিয়ে বেঁচে আছে এবং প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত এবং এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মধ্যে এই সংখ্যা তিনগুন বৃদ্ধি পাবে। আরো একটি হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১৫ সালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো পাঁচ লাখ যা আগামী ২০৩০ সালে বেড়ে নয় লাখ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডিমেনশিয়া কি এবং এর প্রাথমিক লক্ষণ

যখন একজন ব্যক্তির মানসিক সক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে, তিনি আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না তখন তাকে ডিমেনশিয়া বলে। ডিমেনশিয়া হলে মানুষের স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করার সক্ষমতা, মনে রাখার ক্ষমতা, যুক্তি বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এর কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে প্রাথমিকভাবে এই রোগ শনাক্ত করা যায়।

-নিকটবর্তী স্মৃতি ভুলে যাওয়া কিন্তু দূরবর্তী স্মৃতি যেগুলো মস্তিষ্কে ইতোমধ্যে সঞ্চিত আছে সেগুলো থাকবে।

-ডিমেনশিয়ার কারণে বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম, চিন্তা করার প্রবণতা, যুক্তি দিয়ে কিছু করার প্রবণতা, সাধারণ যোগ বিয়োগ করার প্রবণতা ইত্যাদি কমতে থাকবে।

-ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ঘটবে, আচরণজনিত সমস্যা হবে, সহজে বিচলিত হওয়া, আগ্রহ হারিয়ে ফেলা

-সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা, সঠিক শব্দ ব্যবহার করতে অথবা অন্য লোকের কথা বুঝতে অসুবিধা হওয়া।

-চেহারা ও নাম ভুলে যাওয়া, দিনের তারিখ অথবা সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া, অল্প সময়ের মধ্যে প্রায়শই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা।

ডিমেনশিয়ার নানারূপ

ডিমেনশিয়ার নানা প্রকার রয়েছে যার প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট ধরণের মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত।

*কর্টিকাল ডিমেনশিয়া - যা গুরুতরভাবে স্মৃতিশক্তি ধ্বংস করে (আলঝেইমারস এর ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যায়)।

*সাব-কর্টিক্যাল ডিমেনশিয়া, যা চিন্তার গতি এবং কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে (পারকিনসন রোগের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়)।

*ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া, এটি বেশিরভাগই ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। মস্তিষ্কে প্রোটিন জমাট বাধার কারণে এক ধরনের ডিমেনশিয়া হয়। যার ফলে স্নায়ুগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

*ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া, এটি হল আলঝেইমারস রোগের পরে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের ডিমেনশিয়া। রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ায় মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই রোগ হয়। কখনও কখনও লোকের ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমারস দুটো একসঙ্গেই হয়। যাকে ‘মিশ্র ডিমেনশিয়া’ বলে। মস্তিষ্কের মধ্যে ভাস্কুলার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তনালীগুলি ফুটো হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে রক্ত মস্তিষ্কের কোষগুলোতে পৌঁছাতে পারে না এবং কোষগুলো শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

আলঝেইমার্স কি

আলঝেইমার্স হল ডিমেনশিয়ার একটি বিশেষ রূপ। এটি মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ। মস্তিষ্কের কোষেগুলোতে ক্ষয়ের পর জটিল পরিবর্তনের কারণে এই রোগ হয়। উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন জট লেগে মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় ও মৃত্যু ঘটে। যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর নিজেদের মধ্যকার যোগাযোগ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সাধারণত মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অঞ্চলের কোষগুলো এই জটিলতা দেখা দেয়। হিপোক্যাম্পাস হল শেখার এবং স্মৃতি জমা রাখার কেন্দ্র। যার ফলে স্মৃতিশক্তি দূর্বল হয়ে আসে। আলঝেইমারসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সহজেই বিভ্রান্ত এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং কখনও কখনও রাগ দেখানো বা হিংসাত্মক আচরণ করতে পারে।

ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্স এর পার্থক্য

ডিমেনশিয়া একটি সাধারণ শব্দ, যা দিয়ে একজন ব্যক্তির সার্বিক মানসিক সক্ষমতার অবনতিকে বুঝায়। নানা কারণে এই মানসিক সক্ষমতার অবনতি হয়। যার মধ্যে একটি হল আলঝেইমার্স, যা ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ। আলঝেইমারস হল স্মৃতিভ্রংশ। আর ডিমেনশিয়া সার্বিকভাবে বুদ্ধির বৈকল্য বা মস্তিষ্কের সক্ষমতা কমে যাওয়াকে বোঝায়।

আলঝেইমার্স ও ডিমেনশিয়া রোগের মধ্যে মূলত বয়সভেদে পার্থক্য রয়েছে। ডিমেনশিয়ার কারণে যেকোন বয়সেই স্মৃতি হারিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে আলঝেইমার্স রোগের সাথে বয়স বাড়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত ৬৫ বছর ও এর পর থেকেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। ৬০-৮০% ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী এই আলঝেইমার্স। যে কারণে কখনও কখনও ডিমেনশিয়া আর আলঝেইমার্সকে একই মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবে আলঝেইমার্স হল ডিমেনশিয়ার একটি বিশেষ রুপ।

শেষ কথা

সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হল, ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তবে প্রাকৃতিক কিছু উপায় যেমন- জীবনপদ্ধতির পরিবর্তন, মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি, প্রচুর বই পড়া, সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এসবের মাধ্যমে তার দ্রুত গতিটাকে কমিয়ে রাখা যায়। ডিমেনশিয়া রোগীদের জন্য স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ উভয়েরই সম্মিলিত চিকিৎসার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন বিভিন্ন গবেষকরা।

তাছাড়াও খাদ্যাভ্যাসের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। তাই সঠিক খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে একাকীত্ব ও হতাশায় ভুগলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়বেটিস রোগীদের মধ্যে স্মৃতি হারানোর প্রবণতা বেশি। তাই এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পায় না, তাই পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করতে হবে।

গবেষকগণ সম্প্রতি বয়স্কদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখেছেন যে, যারা প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকেছেন তাদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার হার বেশি। তাই স্মৃতিশক্তি বাঁচাতে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিআরটিসি কার্যালয়ে মানববন্ধনের চেষ্টা, থানায় জিডি
মহানগর দায়রা জজের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
বাংলাদেশের ১ কোটি ভিডিও মুছে ফেলল টিকটক
তথ্যপ্রযুক্তি খাত দুই বছরের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে
হিট অফিসার মাসে বেতন পেতেন ৮ লাখ টাকা

সর্বাধিক পঠিত

তারেক রহমানের সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি
আইডিয়ালে ভাই-বোন ভর্তিতে শতভাগ কোটা চান অভিভাবকরা
হিট অফিসার মাসে বেতন পেতেন ৮ লাখ টাকা
আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার অবস্থান জানাল ভারত
দ্রব্যেমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝