স্বাধীনতার পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও রংপুরের পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘাঘট নদীর ত্রিমোহিনী ঘাটে আজও ব্রিজ নির্মাণ হয়নি।
দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে সরকারের বিভিন্ন মহল আর জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস পেলেও বাস্তবে এ ঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী ১৫টি গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। প্রতিদিন এ খেয়া ঘাট দিয়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রংপুর-সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বকসীর দিঘী থেকে ত্রিমোহিনী ও মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের বেনিপুর সীমান্তবর্তী ঘাঘট নদীতে এ খেয়া ঘাটের অবস্থান। এ ঘাটের আশেপাশে প্রায় ১৫টি গ্রাম রয়েছে। ঘাট থেকে মিঠাপুকুর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। আর ৫ কিলোমিটার মধ্যে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। ফলে এসব গ্রামের মানুষ সহজ যাতায়াতের জন্য খেয়া ঘাট পাড় হয়ে পীরগাছাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো। নদীর মিঠাপুকুর অংশের বেনিপুর পর্যন্ত সড়ক পাকা থাকলেও বকসীর দীঘি থেকে ত্রিমোহিনী ঘাট পর্যন্ত সড়ক পাকা করণের কাজ চলমান রয়েছে। ঘাটের দুই পাশের মানুষের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হচ্ছে খেয়া নৌকা। এ ঘাটে দুইটি নৌকা একত্রে করে মানুষ, রিক্সা-ভ্যান, সাইকেল-মোটর সাইকেলসহ নানা ধরনের যানবাহন পারাপার করা হয়। বর্ষায় পানি আর শুষ্ক মৌসুমে বালিতে চরম ভোগান্তিতে চলাচল করতে হয় দুই পাড়ের মানুষদের।
বেনিপুর গ্রামের কলেজ ছাত্রী হাবিবা আক্তার হ্যাপি। তিনি পীরগাছা সরকারি কলেজে পড়েন। জন্মের পর থেকে বাবা-মার সাথে এ ঘাট দিয়ে চললেও এখন প্রতিদিন ঘাট পাড় হয়ে পীরগাছা কলেজে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, সরকার আসে, সরকার যায়। তবুও আমাদের এ ঘাটে ব্রিজ হচ্ছে না। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।
স্থানীয় দেবী চৌধুরাণী অটিজম ও বৃদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহ মো. শাহেদ ফারুক বলেন, এই ঘাট সাধারণ মানুষের জন্য মরণ ফাঁদ। রাতে বেলা রোগী বা জরুরি প্রয়োজনে পারাপার করা কষ্ট সাধ্য। ঘাটে লোক থাকে না। নৌকা অপরপ্রান্তে থাকলে আরো সমস্যা বেশি। ডাকাতি-ছিনতাইয়ে ভয় তাড়া করে বেড়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম, ভোলানাথ দাস, শহিদুল ইসলাম বলেন, দুই পাশে সড়ক পাকা। অথচ মাঝখানে একটি নদী আমাদের গতিপথ পরিবর্তন করে দিচ্ছে। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ঘাট এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা সরানো হচ্ছে। এতে করে আমরা জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছি না।
স্কুল শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, অনেক সময় এসে দেখি নৌকা অপরপ্রান্তে রয়েছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রতি বছর এই ঘাট থেকে সরকার তিন লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আয় করলেও ব্রিজ হচ্ছে না। এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে দুই উপজেলার মানুষ পারশপারিক মেলাবন্ধনে পরিণত হবে।
ঘাটের ইজারাদার আনারুল ইসলাম খোলা কাগজকে বলেন, খেয়া নৌকায় পারাপারের জন্য মোটর সাইকেল ২০ টাকা, বাই সাইকেল ১০ টাকা, ভ্যান-রিক্সা ২০ টাকা এবং মানুষ ৫ টাকা করে নেয়া হয়। প্রতি বছর হালখাতা করে এই টাকা উত্তোলন করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। আমরাও ব্রিজ হলে খুশি।
স্থানীয় কৈকুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লো চলাচল করে না এমন স্থানে ব্রিজ থাকলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এই ঘাটে আজও ব্রিজ না হওয়া টা দু:খ জনক। মানুষের কষ্ট লাঘবে অতিদ্রুত ঘাঘট নদীর ত্রিমোহিনী ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ জরুরি বলে আমি মনে করি।
কেকে/এইচএস