হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কয়েক ফুট দক্ষিণে পৌরসভার খোলা ডাস্টবিন, এতে ময়লার ভাগাড়-পাশে রাস্তার ওপর সারিবদ্ধ ৫টি অস্থায়ী দোকান। শিশুরা রোজ এসব দোকান থেকে অস্বাস্থ্যকর তেলেভাজা খাবার কিনে খাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে জেলার আরো প্রায় দেড় হাজার বিদ্যাপীঠের সামনেই এমন না হলেও এর কাছাকাছি অবস্থা। ঝালমুড়ির দোকানে ধুলায় গিজগিজ করে, চানাচুরমুড়ির সঙ্গে আগেরদিন রাতে তৈরি মসলার ঝোল, পেঁয়াজ, মরিচ, শসা, টমেটো ও অন্য উপকরণ মিশিয়ে তারপর শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছুটির কয়েক মিনিট পর প্রধান ফটকের বাইরে কয়েকজন শিশুকে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই সারা দিন খালিপেটে থেকে বিকালে এসব খেয়ে বাড়ি ফিরেছে।
দিবা শাখায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্র খলিলুর রহমান আরিফ তাদের একজন। সে জানায়, দুপুর ১২টায় খালিপেটে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসে। ছুটির অনেক আগেই খিদে পেয়েছে। তাই চানাচুর কিনে খেয়েছে সে।
বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র চিড়াকান্দি এলাকার উচ্ছ্বাস পাল একই কারণে বাড়ি ফেরার আগে ফুটপাতের দোকান থেকে চটপটি খেয়েছেন।
চানাচুর বিক্রেতা রঞ্জন দাস জানান, তিনি রোজ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অন্তত ২০০ জন শিক্ষার্থীর কাছে চানাচুর বিক্রি করেন। কথা বলতে বলতেই আরো কয়েকজন ছাত্রকে চানাচুর তৈরি করে দেন রঞ্জন। শিশু কিশোররা তখনো তার তিন দিকে দাঁড়িয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ হাজার ৩৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭১ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য- এই পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর বড় অংশ প্রত্যেকদিন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকে। ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ছাত্রছাত্রীর প্রতিনিয়ত অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের সামনে এসব অস্বাস্থ্যকর খবার বিক্রি বন্ধের চেষ্টা সফল হয়নি।
এ তথ্য জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন বলেন, দোকানিরা পাঠদান শুরু ও শেষ হওয়ার সময় ফটকে এসে বসে। শত চেষ্টায়ও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর এসব খাবার খেয়ে শিশু-কিশোররা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
নোংরা পরিবেশের এসব খাবারের ফটো দেখে অনেকটা আতঙ্কসূচক অনুভূতি প্রকাশ করলেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাশ। তিনি বলেন, এসব খাবার খেলে শিশুরা নির্ঘাত অসুস্থ হবে। এগুলোতে পোড়া তেল ও খোলা বাজারের উপকরণ ব্যবহার হয়। আর ময়লার ভাগাড়ের পাশে খাবার খাওয়াতো স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। তাও বিকালবেলা খালিপেটে। শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে এ খাবার গ্রহণ করা বন্ধ করা জরুরি।
আর মাধ্যমিক পর্যায়ে মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া, বাসা থেকে টিফিন বক্স না দেওয়া ও অভিভাবকের অসেচতনতাকে ছাত্রছাত্রীদের এ খাবারের প্রতি আসক্তির জন্য দায়ী করছে জেলা শিক্ষা বিভাগ।
যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহহ বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বিদ্যালয়গুলোতে মিড ডে মিল ব্যবস্থা নিয়মিত হয়নি। অনেক শিক্ষার্থীকে বাসা থেকেও খাবার সঙ্গে দেওয়া হয় না। এজন্য তারা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করছে। এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক সেমিনার করব।’
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা জানিয়েছেন, তারা বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে আশপাশের দোকানদাররা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। পরে আবার ফিরে এসে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গভর্নিং বডির তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।
কেকে/এমআই