প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪, ১২:০৭ পিএম (ভিজিটর : ৮৮)
তারকাদের পদচারণে ফের মুখর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। তবে এবারের দৃশ্যপট খানিকটা ভিন্ন। দশম বিপিএলের সুবাদে গত মাসে লিটন-মাহমুদউল্লাহ-শরিফুল-বিজয়রা সেখানে ম্যাচ খেলেছেন, অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন, তবে ভিন্ন ভিন্ন দলের জার্সিতে। এবার তাদের সবার জার্সির রং একই, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের হয়ে যে লড়তে চলেছেন।
বিপিএল শেষ হওয়ার পর ঠিকঠাক বিশ্রামেরও ফুরসত মেলেনি। তড়িঘড়ি করেই সিলেটে রোববার আনুষ্ঠানিক অনুশীলনে নামতে হয়েছে টাইগারদের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা যে আজই শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেটে
শুরু হবে নতুন এক অধ্যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে নাজমুল হোসেন শান্তর জমানায় ঢুকে যাচ্ছে টাইগাররা। দলের নেতৃত্বে শান্ত নতুন নন। সবশেষ সিরিজও এই তরুণের নেতৃত্বে খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি তখন দায়িত্ব পেয়েছিলেন খণ্ডকালীন সময়ের জন্য। সম্প্রতি আগামী ১২ মাসের জন্য তিন সংস্করণেই টিম বাংলাদেশের অধিনায়ক করে দেওয়া হয়েছে শান্তকে, ওই ঘোষণার পর এটাই টাইগারদের প্রথম সিরিজ।
পাকাপাকিভাবে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম সিরিজ, স্বাভাবিকভাবেই শান্ত রোমাঞ্চিত এবং আনন্দিত। রোববার সিলেটে সিরিজপূর্ব আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তা জানিয়েও দিলেন, ‘অবশ্যই এটি অনেক আনন্দের। পরিবারের জন্য অনেক গর্বের ব্যাপার। প্রতিটি ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। ওই সুযোগ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) করে দিয়েছে। অবশ্যই তাদের ধন্যবাদ জানাই আর খুবই আনন্দিত।’ চ্যালেঞ্জটাও টের পাচ্ছেন তরুণ অধিনায়ক, ‘কাজটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং।...প্রতিটি খেলোয়াড় সম্পর্কে জানতে হবে। যদিও খেলার মধ্যেই থাকি একসঙ্গে। দেখা হয়, কথা হয়। পরিকল্পনা করা আমার জন্য সহজ হবে, যেহেতু তিন সংস্করণেই দায়িত্বে আছি।’
শান্তর জন্য এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ছন্দে ফেরা। এবারের বিপিএলটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে তার। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি মাতিয়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন জাকের আলী, নাইম শেখ, এনামুল হক বিজয়ের মতো খেলোয়াড়রা। মাঠে সবাইকে এক সুতোয় বাঁধার কাজটা শান্তকেই করতে হবে। আরও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জয়ের ধারায় থাকা। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে কখনোই সেভাবে সখ্য গড়ে ওঠেনি টিম বাংলাদেশের। তবে ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণে তাদের সাম্প্রতিক অতীত দারুণ। ঘরের মাঠে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্র করেছে টাইগাররা।
অজেয় থেকে টানা পঞ্চম সিরিজ কাটানোর চ্যালেঞ্জ এখন শান্ত ব্রিগেডের সামনে। সেই চ্যালেঞ্জটাও নিতে হচ্ছে তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই। সাকিবের থেকেই নেতৃত্বভার বুঝে নেওয়া শান্ত এতে দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না। সাকিবহীন দল নিয়েই তো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্রয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এবার তো ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে সামলাতে হবে, যে দলটির বিপক্ষে টিম বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যথেষ্টই উজ্জ্বল। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ সাক্ষাতে জয়ের হিসাবে ৯-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা হয়তো উজ্জ্বলতার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে না, তবে শক্তি-সামর্থ্যে দুই দলের মধ্যে এখন ব্যবধান খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দুই দলের লড়াই হয় জমাট, ফলে ক্রিকেট বিশ্ব পেয়েছে নতুন এক দ্বৈরথ।
২০১৮ সালের মার্চে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের ম্যাচ ছড়িয়েছিল উত্তেজনা। এরপর দল দুটি যতবারই মুখোমুখি হয়েছে, ওই উত্তেজনার ঝাঁজ টের পাওয়া গেছে। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে হওয়া বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ বিতর্ক দ্বৈরথে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। মোদ্দাকথা, লড়াইয়ের ময়দানে এখন আর কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। বিষয়টা খুব ভালো করেই জানেন অতিথিদের কোচ ক্রিস সিলভারউড। তবে অতীত নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ এই ইংলিশম্যান। শিষ্যরা মাঠে সেরাটা দিয়ে খেলুক, এটিই প্রত্যাশা তার। কিন্তু তারকা ওপেনার কুশাল পেরেরাকে দেশে রেখে আসা লঙ্কানরা সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পাচ্ছে না তাদের নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকেও।
সিলভারউড তা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন না। তার সাফ কথা-নিজ দল কিংবা প্রতিপক্ষ শিবিরে কে আছে আর কে নেই, সেসব নিয়ে না ভেবে লড়াইয়ের ময়দানে নিংড়ে দিতে হবে নিজেদের সেরাটা। শান্তর নতুন অধ্যায়ে সাকিবহীন বাংলাদেশেরও ভাবনা অভিন্ন। টাইগার দলপতির এই কথাতেই তা পরিষ্কার-চ্যালেঞ্জ থাকবে, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত।