চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় চরমোনাই পীরের সমর্থকদের মাহফিল করতে বাঁধা ও তাদের বাড়িতে হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে মতলব উত্তর থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আয়োজনে আগামী ২৩ নভেম্বরের এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মাহফিল আয়োজক কমিটির অন্যতম বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি মতলব উত্তর উপজেলার সভাপতি ও থানায় অভিযোগকারী মাহফুজ হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের ও স্থানীয় কবরবাসীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় হাসিমপুর মাদ্রাসা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে হাসিমপুর বকুলতলা খেলার মাঠে ২৩ নভেম্বর ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
১০ নভেম্বর (রোববার) আনুমানিক বেলা ১ টার দিকে হাসিমপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ওই দরবারের পীর আশফাক আহমেদকে দাওয়াত দিতে তার মাদ্রাসায় গেলে কেবল অন্য তরিকার হওয়ার কারণে তিনি দুর্ব্যবহার করে।
এ সময় তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমার উপর হামলা করতে আসলে আমি দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করি। বেলা আড়াইটার দিকে এই পীরের লোকজন আমার বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। এই সময় তারা আমার সংগঠনের অন্যতম নেতা ও আমার সাথে কাজ করা প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী ভাইকে আমার বাড়িতে একা পেয়ে মারধর ও বাড়ির মহিলাদের সাথে অশালীন আচরণ করে। বর্তমানে আমরা কয়েকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি আরও জনান, এই মাহফিল বাস্তবায়ন করা এখন আর আমাদের একার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই মাহফিল বাস্তবায়নের জন্য মতলবের খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কাসিমিয়া ঐক্য পরিষদ, ইত্তেহাদুল ওলামা, ইত্তেফাকুল উলামাসহ সমমনা বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
কলেজে পড়েও পাঞ্জাবি টুপি পড়া ও দাড়ি রাখা এক ধার্মিক যুবক স্থানীয় মাহফুজ হাসানের সাথে কেবল ধর্মীয় মতের মিল না থাকায় হাশিমপুর দরবারের পীরের এ ধরনের কার্যত্রমে হতবাক হয়েছে বলে জানায় স্থায়ীয় কয়েকজন যুবক। তারা আরও জানায়, হাশিমপুর দরবারের পীরের লোকদের হুমকি ধমকির কারণে স্থানীয় মাহফিল আয়োজকদের কয়েকজন বর্তমানে এলাকা ছাড়া। তিনি এলাকায় খুবই প্রভাবশালী, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন তার লোক বনে যায়।
এদিকে, হাসিমপুর দরবারের পীর মাওলানা আশফাক আহমেদ এর বক্তব্য নেয়ার জন্য মতলব উত্তরের হাশিমপুরে তার দরবার শরীফ ও পাশ্বেই তার স্থানীয় বাসভবনে গিয়ে জানা যায় তিনি বর্তমানে তার ঢাকার বাসায় আছেন। পরে তার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতলব উত্তর উপজেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের ও স্থানীয় কবরবাসীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় এবং আন্দোলনে আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়ার অনুষ্ঠান হিসেবে আমরা ২৩ নভেম্বর হাশিমপুর নদীর পাড় খেলার মাঠে এই ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করেছি। প্রশাসন আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে না পারলে আমরা মাহফিল বন্ধ করে দিব। তবুও আমরা কোন ধরনের সংঘাতে যেতে রাজি নই। কেননা, আমরা সংঘাতে বিশ্বাসী নই।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক জানান, হাশিমপুরে মাহফিলকে কেন্দ্রকরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়েছিল। মাহফিলে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
কেকে/এজে