সাতক্ষীরায় তিন উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে এমন জলাবদ্ধতায় জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এসব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ করে দিনমুজুররা পড়েছে চরম বিপাকে। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন এসব মানুষজন। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুর স্কুল যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে।
জলাবদ্ধ এসব এলাকা হচ্ছে পৌর এলাকার রাজার বাগান, ইটাগাছা, কামালনগর, বদ্দিপুর, তালতলা, উত্তর কাটিয়া, মাগুরা, মাঠপাড়া, মুনজিতপুর, গড়েরকান্দা, সুলতানপুর, রথখোলা, রাজারবাগান, কুখরালীসহ সদর উপজেলার লাবসা, গোপিনাথপুর, ধুলিহর, শ্যাল্যে, মাছখোলা, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা ও বল্লী গ্রামসহ আশাশুনি এবং কলারোয়া উপজেলার অন্তত ৪০গ্রাম জলাবদ্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার জন্য সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ি করছেন ভুক্তভোগি সাধারণ মানুষজন। তাদের দাবি নদী ও খাল খননে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই জেলার একটি বড় অংশ প্রতি বছর পানিতে ডুবে যায়।
সাতক্ষীরা পৌর রাজার বাগান এলাকার মুজিবর রহমান জানান, গেল চার মাস ধরে তার বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে। নিয়মিত বদ্ধ ও নোংরা পানিতে চলাফেলা করার ফলে পায়েরতলা ও শরীরে চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া সংসারের রান্না-বান্নাসহ অন্যান্য কাজে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারীদের। অথচ পৌরসভার সবধরনের কর প্রদান করার পরও পানি নিষ্কাশন বা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে জানান তিনি।
একই এলাকার স্কুল ছাত্রী ইশরাত ফারহানা মিমি জানায়, ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন পচা কাদা পানি মাড়িয়ে শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার পল্লীমঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেতে হয় তাদের। শুধু তারাই নয় নিকটবর্তী মাছখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্কুল কলেজে পড়া অন্তত ২ থেকে ৩ হাজার শিক্ষার্থী জলাবদ্ধ পানি মাড়িয়ে যাতয়াত করে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের কোনো উদ্যোগই নেয় না বলে জানান তারা।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এ্যাড. আবুল কালাম জানান, ষাটের দশক থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুল প্রকল্পগুলো আজকের এই সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। জোয়ার-ভাটার নদ-নদীগুলোতে যত্রতত্র স্লুইস গেট, ক্লোজার, বাধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার বিরূপ প্রভাবে আজকের এই অবস্থা। এরসাথে অনিয়ন্ত্রিত-অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ সমস্যাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, বেতনা নদী খননের প্রথম প্রকল্পের শুরুতেই আমরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বলেছিলাম এটা অর্থের অপচয় এবং নদী ধ্বংশ হবে। পরবর্তীতে বেতনা-মরিচ্চাপ ও সংলগ্ন ৮২টি খাল খননসহ ৪৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের সাথে সাথেই আমরা পপ্রতবাদ করেছিলাম। এই প্রকল্প সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরো প্রকট হবে বলে আমরা দাবী করেছিলাম। প্রকল্পের কাজ শুরুর পূর্বেই জনগনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তফা কামাল কিভাবে এই প্রকল্প অর্থবহ করা যায় সেজন্য আমাদের প্রস্তাবনা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় তিনমাস সরেজমিনে সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনা করে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃক্ষজনক হলেও সত্য নাগরিক কমিটির সে প্রস্কাবনাগুলো নিয়ে নূন্যতম আলোচনাও করা হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তিনি জেলার জলাবদ্ধতা সমস্যা এবং নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন রোধে বর্তমানে যেখানে যেটুকু বাস্তবতা রয়েছে সেই বাস্তবতা অনুযায়ী নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যত্রতত্র অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ নিয়ন্ত্রণ করার উপর গুরুত্বরোপ করেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, অনেক নদী বা খালের নেটপাটা তুলে দেয়ার পর জলাবদ্ধতা বেশ কমে গেছে। তাছাড়া বেতনা ও প্রাণসায়ের খালের খনন কাজ শেষ হলে আগামীতে জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে আশা করছেন তিনি।
কেকে/এমআই