জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এবার আগাম আলু চাষের ধুম পড়েছে। আলুর বীজ বপনে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার কৃষাণ-কৃষানীরা। স্বল্প সময়ে উৎপাদন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আগাম আলু চাষে এখানকার কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
আগাম আলু চাষে অন্যতম জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা। দেশের আগাম আলুর সিংহভাগ উৎপাদন হয় এখানে। এ উপজেলার বেশীভাগ জমি উচুঁ হওয়ায় আগাম হাইব্রীট জাতের আমন ধান কর্তনের পর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম রুমানা, সেভেন ও কারেজ জাতের আলু লাগানো শুরু হয়।
৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এই জাতের আলু সংগ্রহ এবং প্রথম বাজার ধরায় কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে থাকেন। আগাম আলু চাষে সেচ ও সার কম লাগাসহ স্বল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় আগাম আলু চাষে এখানকার কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবছর বীজের দাম বেশি ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে আলু চাষের খরচ বাড়বে বলে জানিয়েছেন আলু চাষিরা। তবুও তারা দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে।
কালাই উপজেলার কৃষক শাহীন বলেন, বাজারে আগাম জাতের আলুর চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। বপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। এবছর তিনি ১বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছেন। প্রতিকেজি বীজ আলু কিনেছেন ৭৫ থেকে ৮০টাকায়। গতবারের তুলনায় খরচটা বেড়েছে। ভালো ফলন হলে সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। এজন্যই ধান কাটার সাথে সাথে আগাম আলু চাষ করি।
উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাতিয়র গ্রামের কৃষক হামিদুল হক বলেন, এ বছর ১বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছি। এবার আগাম জাতের আলুত চাষে লাভের আশা করছি।
এ উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বেগুনগ্রাম গ্রামের আলু চাষী আব্দুল হাকিম জানান, আগাম আলুর রোগ বালাই কম থাকে এবং প্রথম বাজার ধরায় ভালো দাম পাওয়া যায় বলে তারা লাভবান হয়। তারা বলেন, এখানকার কৃষকরা আগাম আলু আবাদে যে বিপ্লব ঘটিয়েছে তা ধরে রাখতে দরকার সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম কমানো সহ সরকারী পৃষ্টপোষকতা।
এ উপজেলার আরেক আলু চাষী সুজাউল জানান, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু ক্ষেত থেকে তোলা যায়, ফলে কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ বেশি।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, আগাম আলু চাষের জন্য এ উপজেলার জমি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় আগাম ধান কর্তনের পর এখানকার কৃষকরা এক খন্ড জমিও ফেলে রাখে না। এ ছাড়া বছরের পর বছর যে জমিগুলো পতিত থাকতো গত কয়েক বছর থেকে সে জমিগুলোতে আগাম জাতের আলু চাষ করে ইতিমধ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছে এখানকার কৃষকরা।
কেকে/এমআই