জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল খেলায় ইংরেজি বিভাগ এবং গণিত বিভাগের মধ্যকার মারামারিকে কেন্দ্র করে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুর করে । এ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাংচুরের সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি, নিন্দা ও প্রতিবাদে তোলপাড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার (১৭ নভেম্বর) ইংরেজি বিভাগ ও গণিত বিভাগের ফুটবল ম্যাচে ইংরেজি বিভাগ জয়লাভ করার পর তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এ দুই বিভাগ শিক্ষার্থীরা।
পরে দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ১০ জন আহত হয়। খেলার মাঠে বিষয়টি মিটমাট হলেও বাসে আসার সময় গণিত বিভাগের কয়েকজন ছাত্র লাঠি রড, চেইন নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে ইংরেজি বিভাগের ইব্রাহিম, শিপন, কলিমসহ ৬ জনকে আহত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাংচুর করে।
এদিকে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গণিত বিভাগের সাধারণ সম্পাদক সাদিউল সৈকত, ছাত্রলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় নেত্রকোনা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সদ্য অবাঞ্ছিত সেক্রেটারি ১৪ ব্যাচের এনামুল হক ইহাদ, ফয়সাল ও ১৬ ব্যাচের এএইচ হৃদয় লাঠি হাতে বাসের কাঁচ ভাঙ্গে।
ইংরেজি বিভাগের উম্মে হাবিবা বলেন, গণিত বিভাগের সৈকত, ইহাদ, ফয়সাল আর হৃদয় লাঠি নিয়ে বাসে হামলা করে, মারামারি করে খেলায় হারার পর। আমাদের বিভাগের কলিম ও ইব্রাহিম ভাইকে অনেক মারধর করে। মেয়েদের হেনস্তা করে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করা এবং নারী শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের হ্যারেজমেন্ট করার কারণে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী এনামুল হক ইহাদ বলেন, টাইব্রেকার শেষে ইংরেজি বিভাগের গোলকিপার আমাদের দর্শকদের দিকে বালু দেয়। আমরা যখন প্রতিবাদ করতে আসলাম তখন তারা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের ওপর হামলা করেন। তারা পতাকার পাইপ দিয়ে আমাদের মারতে আসে। ক্যাম্পাসের বাসে আসার সময় আমাদের বাসের দিকে বাঁশ দিয়ে জানালায় খোঁচা মারে আমাদের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে। তখন আমাদের জুনিয়ররা একটু রেগে যায়। আমরা কালকে প্রতিবাদ লিপি প্রক্টর অফিসে দিব।
বাস ভাঙচুরের বিষয়ে গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল রানা বলেন, মূলত যখন দরজা খুলছিল একজন বের হতে চাইছিল। তখন তাকে দাওয়া দিলে, সে দরজা বন্ধ করে দেয় ওই সময়ই মূলত দরজাটা ভেঙ্গে গেছে।
এদিকে খেলার মাঠে মারামারিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে হামলা ও ভাংচুর করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাস ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ভুমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল সায়েল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুর, নিজের বিভাগকে নিয়ে আরেক বিভাগের সাথে মারামারি করা- এসব করে কি নিজেদেরকে বড় গুন্ডা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? নাকি ছাত্রলীগের নতুন গুন্ডামির বৃত্তি খুঁজে বেড়াচ্ছেন? ছাত্রদের এভাবে আচরণ করলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হবে। এদের এখনই রুখতে হবে, নইলে আগামীতে শিক্ষাঙ্গন হবে গ্যাংস্টারদের আড্ডাখানা হবে।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, খেলা নিয়ে টুকটাক ঝামেলা হয় এটা খুবই স্বভাবিক কিন্তু সেটার ওপর বেইজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙ্গার মতো সহস কোথায় পাই তারা? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সকল শিক্ষার্থীদের, এটা কারো বাবার সম্পত্তি না। যারা এমন উগ্রতার পরিচয় দিয়েছে ফুটেজ দেখে সকলকে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, অন্যথায় অন্য ডিপার্টমেন্টগুলো ছোটখাটো ঝামেলায় বাস ভাঙা শুরু করবে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আজ ভিসি স্যার ক্যাম্পাসে নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিবেন।
কেকে/এজে