হাবিবুর রহমান ওরফে হবুল। এক সময় জড়িত ছিলেন আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটে। রাজধানীর বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান এলাকায় আওয়ামী লীগের সকল মিটিং-মিছিলেও ছিলেন সক্রিয়। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন সাবেক এমপি হাবিব হাসানের (তার মামা) অন্যতম অর্থদাতা। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে সেজে গেছেন পাক্কা বিএনপি সমর্থক। তার দেখা মিলছে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও। সম্প্রতি, বিমানবন্দর এলাকায় স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত হাসিনার ফাঁসির দাবিতে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণ নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। এরই মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে হাবিবুরের বিভিন্ন মিটিং মিছিলের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবিতে ধূর্ত হাবিবুর রহমান ওরফে হাবুলকে বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছাত্র হত্যার অন্যতম আসামি শাহজাহান মণ্ডলের সাথে প্রথম সারিতে মিটিং-মিছিলের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হবুল একসময় বৃহত্তর ঢাকা-৫ আসনের (বর্তমানে ঢাকা-১৮ আসন) সাবেক এমপি এ কে এম রহমত উল্লাহর কাছের লোক ছিলেন। সেসময় রহমত উল্লাহর নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে হাবিবুর। রহমত উল্লাহর আসন বিভাজনে তিনি পরবর্তীতে এ আসনের সাবেক এমপি সাহারা খাতুনের (প্রয়াত) ছত্রছায়ায় রাজনীতি শুরু করলেও পরবর্তীতে হাবিব হাসানের হয়ে মিটিং মিছিলে অংশ নেন। অবৈধভাবে টাকা কামাতে বেছে নেয় আওয়ামী অঙ্গ-সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএনসিসি ৪৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমানকে। এসময় পুরোটা সময়জুড়ে কাউন্সিলর আনিসুর রহমানকে নিজের ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে জমির ব্যবসা, গরুর হাটের ইজারা ও ঠিকাদারির আড়ালে চাঁদাবাজির মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়েন হাবিবুর রহমান হবুল।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, বিমানবন্দরের এক সময়ের গোল্ড মাফিয়া মুরগি মিলনের শিষ্য হওয়ায় হাবিবুর কোর্টপ্রাঙ্গনে মুরগি মিলনকে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করায়। সেসময় সোনা চোরাচালানে গ্রেফতার হয়ে মুরগি মিলন জেলহাজতে যাওয়ায় পরবর্তীতে নিজেকে বাঁচাতে সন্ত্রাসী ভাড়া করে মুরগি মিলনকে খুন করায় এই হাবিবুর ওরফে হাবুল। সেসব মামলায় হাবিবুরের জেল খাটার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
অভিযুগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান হবুল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ভাই আমি কোন রাজনীতি করি না। এক সময়ে আওয়ামী লীগ সমর্থন করতাম। গত ১০ বছর ধইরা কোন মিটিং-মিছিলে যাই না। বক্তব্যে গোল্ড মাফিয়া মুরগি মিলনের সাথে নিজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করলেও তবে হাবিবুরের দাবি তিনি সোনা চোরাচালানে জড়িত ছিল না। সেই সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসানের অর্থ যোগানদাতার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।