প্রকাশ: শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪, ৬:৫৭ এএম (ভিজিটর : ২০৪)
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কুষ্টিয়ার চাষিরা তামাক চাষ করছেন। তারা ধান, গম বা ভুট্টা চাষ কমিয়ে তামাক চাষের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। জেলার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার চাষিরা তামাকের ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফার আশায় তামাকের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো, নাসির টোব্যাকো, আকিজ টোব্যাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে চাষিদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা, বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আষ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝানোর পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে তামাকের চাষ হয়। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক ও তৎপর। মাঠ পর্যায়ে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে ধান, ভুট্টা, গম, আলু ও বিভিন্ন ফল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সচেতন হলে কৃষকরা তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসবেন।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাকের গুঁড়া বাতাসের সঙ্গে মানুষের শ্বাসনালি দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে। তামাকের কারণে মানুষের ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, টিবিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কেউ তামাক গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাক ক্ষেতে সার দিচ্ছেন। তামাক পোড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধা ও শিশুরা। আর প্রান্তিক কৃষকরা তামাক পাতা তোলা ও পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত। বসতবাড়ির আশপাশ ও রাস্তার দুই পাশে তামাক পোড়ানোর ঘর তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার শিশু-কিশোররা। রবিশস্যের পরিবর্তে তামাক চাষকেই অধিক লাভজনক মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তামাক চাষিরা বলছেন, তামাক চাষে প্রচুর খাটুনি। স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। তারপরও রাতদিন পুরুষ, নারী ও শিশুরা কাজ করে। তামাকের সময় বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে তামাক চাষে লাভ বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় ১ লাখ টাকার তামাক বিক্রি হয়। প্রতি বিঘায় ৫ হাজার চারা লাগানো যায়। বিঘায় ১০ মণ শুকনো তামাক হয়। প্রতি কেজি শুকনো তামাক বিক্রি হয় প্রায় ২০০ টাকায়। খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। লাভ থাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তামাকের আবাদ তিন মাসেই হয়ে যায়। বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি। তাই অনেকে তামাক চাষে ঝুঁকছেন। তামাক কোম্পানির সুপারভাইজার ও কর্মকর্তারা চাষিদের উৎসাহ এবং অনেক সুযোগ-সুবিধা দেন। তারা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।