কুয়াশায় সিক্ত শীতের শিশির কণায় প্রকৃতির ধরণীতল যৌবণহারা বেদনায় বিমর্ষিত। প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘনকুয়াশার হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতির মাঝে নেমে এসেছে জড়তা ও মৌণতা। প্রকৃতির এহেন আবর্তন-বিবর্তনে মানুষের মনে শীতের আমেজ দেখা দেয় এবং রুচির পরিবর্তন ঘটে। আর ক’দিন পরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। রুচির পরিবর্তন ও উৎসবে শুরু হবে খেজুর রস সংগ্রহের পালা।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহে গাছ কাটার ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
তবে পাড়া-গাঁয়ে পূর্বের মতো খেজুর গাছ নেই। এলাকার জনপদে বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে কিছু কিছু খেজুর গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে। শীতে খেজুর রসের কদর বেশী। এ রস সকলের প্রিয়। পৌষে-পার্বনে পিঠা, পায়েস খেতে খেজুর রসের স্বাদ আলাদা।
প্রতিটি পাছ কাটতে গাছিরা গাছের মালিক থেকে ২০০/২৫০ টাকা নিচ্ছেন। খেজুর গাছের মাথায় রয়েছে ডালযুক্ত ঝোপ। প্রত্যেক ডালে রয়েছে বিষাক্ত কাটা। ছিকন পাতার মাথাও কাটাযুক্ত। তাও বিষাক্ত। গাছিরা ধারাল দা দিয়ে মাথার নিন্মাংশের কিছু অংশ পরিষ্কার করেন। এরপর সাদা অংশটি রোদে শুকাতে দেন।
পরে ছাটা অংশের যেখানে রস নিঃসরণ হয়, সেখানে “আই” আকৃতির ছিকন প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের কঞ্চি আদা ইঞ্চি পরিমাণ গাছে ঢুকিয়ে দেন। যুক্ত থাকা দুটো ছোট খুটির সাথে একটি পাতিল ঝুলিয়ে দেন। “আই” আকৃতির কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোটায় ফোটায় গাছের রস ঝুলন্ত পাতিলে পড়তে থাকে সারা রাত। গাছের সাদা অংশ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন রোদে শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস মিষ্টি হয়। সকালে গাছের মালিক রসভর্তি পাতিল বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রয়োজন মতো বাড়িতে সিদ্ধ করে পরিবার-পরিজন মিলে খেতে থাকেন। বিশেষ করে ভাপা পিঠা ও পায়েস খেতে এ রসের তুলনা নেই। আবার কোন কোন সময় গাছের মালিক রস বিক্রি করে টাকা ও উপার্জন করেন।
অতীতে কোন কোন সময় দেখা যেত অনেকেই নিজের ও বর্গা নেয়া গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বড় কড়াইতে সিদ্ধ করে খেজুর গুড় তৈরি করে হাট-বাজার বিক্রি করতেন। এভাবে অর্থ উপার্জন করতেন অনেক পরিবার। আবার খেজুর রস সিদ্ধ করে ঘন করে প্রচলিত ভাষায় যাকে খেজুর রাফ বলা হয় তাও বিক্রি করে টাকা উপার্জন করা হতো। এর মূল্য ও কদর অনেক বেশি। শীতে খেজুর রস খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাধু খাবার। বাড়ি-ঘরে এ রস দিয়ে অনেক রকম নাস্তা তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে বড়হাতিয়া ঘোনার মোড় এলাকার গাছি মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, পূর্বের মতো এলাকার বর্তমানে তেমন খেজুর গাছ দেখা যায় না। আগে শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ কেটে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যেত। কিন্তু, বর্তমানে খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় রোজগারের পরিমাণ অনেকটা কমে গেছে।
কেকে/এজে