প্রকাশ: শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪, ৭:০১ এএম আপডেট: ২৬.০৯.২০২৪ ২:৫৬ পিএম (ভিজিটর : ১৮৫)
কুসিক (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) মেয়র পদে উপনির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে নগরীকে। এ উপনির্বাচনের ভোট হবে আজ শনিবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। আর এবারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। এ নির্বাচনে থাকছে না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নগরীর প্রায় ৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং আনসার ভিডিপিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে।
এই উপনির্বাচনকে ঘিরে ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকেই মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের পরদিন পর্যন্ত এদের টহল অব্যাহত থাকবে। ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৫ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৭টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি ৩টি ওয়ার্ডে ১টি করে ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ২টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং, র্যাবের ২৭টি টিম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ ৪ জন পুলিশ, অস্ত্রসহ ২ জন আনসার ও লাঠিসহ ১০ নারী এবং পুরুষ আনসার ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য ১ জন বেশি অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য থাকবেন। অর্থাৎ সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র্রে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়াও নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে এই উপনির্বাচনে সংঘটিত অপরাধ আমলে নেওয়া ও সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পাদনের জন্য।
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন জানান, বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া কুসিক নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি ভালো আছে। ২৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে একজন সশস্ত্র এসআইর (পুলিশের উপ-পরিদর্শক) নেতৃত্বে চারজন কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে।
কুমিল্লার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক এবং ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানা। ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসেন। ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম তানজিলা আক্তার। ১৩, ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্বাস উদ্দীন। ১৬, ১৭ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান। ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম সৈয়দা মোসাদ্দেকা। ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ এবং ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলম।
এ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক নারী ও তিন পুরুষসহ চার প্রার্থী। ঘড়ি প্রতীকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, ঘোড়া প্রতীকে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল কুমিল্লা মহানগর আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন কায়সার, বাস প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার এবং হাতি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে নগরীকে একরকম নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন এবং জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, কুমিল্লাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও। কোনো বিশৃঙ্খলা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৭ জুলাই রিফাত মেয়রের দায়িত্ব নেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যু হয়।
এরপর ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটিতে মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার ৬ হাজার ৯২ জন বেশি।