শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪,
২ কার্তিক ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম: এক হওয়ার আগেই বিচ্ছেদের পথে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক      ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে জামায়াত-শিবির: জয়      সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জনের মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি      সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভাঙার কাজ করছি: আসিফ মাহমুদ      ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু      ১২ টাকায় বিক্রি নিশ্চিতে দুই আড়তে দৈনিক ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে কর্পোরেট উৎপাদকরা      শতকোটি ব্যয়েও হয়নি মশা নিধন      
জাতীয়
শতকোটি ব্যয়েও হয়নি মশা নিধন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:০৪ পিএম আপডেট: ১৭.১০.২০২৪ ৪:২৫ পিএম  (ভিজিটর : ৪৩)

মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছরই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন শতকোটি টাকার বেশি খরচ করে আসছে। চলতি অর্থবছরে দুই সিটিতে মশা মারার জন্য ব্যয় ধরা হয় ১৫৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে অর্থ ব্যয়ের তুলনায় মশা নিয়ন্ত্রণ হয়নি বলে অভিযোগ নগরবাসীর। কারণ মশার উপদ্রব দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর কারণ সবার জানা থাকলেও দায় স্বীকার করছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সূত্র মতে, মশা মারতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক কিনতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় রাখা হয়। এ ছাড়া ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহনে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ও জীবাণুনাশক কিনতে ৫০ লাখ টাকা এবং মশা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি কিনতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সূত্র মতে, মশা নিধনে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে ডিএনসিসিও। এর মধ্যে মশা নিধনের ওষুধ কেনার জন্য রাখা হয় ৬৫ কোটি টাকা। আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার জন্য রাখা হয় ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ফগার, হুইলও স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি টাকা। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে রাখা হয় ৫ কোটি টাকা। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ৩০ কোটি টাকা ও মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল প্রায় ১২২ কোটি টাকা।

এদিকে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি সঠিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মশার লার্ভা ধ্বংসে ভুল পদ্ধতি প্রয়োগের কারণে এখনও মশা তেমন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি নগর প্রশাসন। এ ছাড়া মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া ফগিং পদ্ধতিও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে মশা নির্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকায় ব্যবহৃত এ পদ্ধতিটি ভুল প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের পরিদর্শকদের কাছে। তাতে মশা ধ্বংসের বদলে অর্থের অপচয় হয়েছে। ফগিংয়ে (প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধনে ধোঁয়া ছিটানো) অর্থ অপচয় না করে লার্ভিসাইডিংয়ে (লার্ভা নিধনে ওষুধ ছিটানো) মনোযোগী হতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে মশা নিধনে দুই সিটির বড় অঙ্কের বাজেট থাকলেও নেই কীটতত্ত্ববিদ। দুই সিটিতে কীটতত্ত্ববিদের জন্য পদ আছে; কিন্তু সেখানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে কীটতত্ত্ববিদ ছাড়াই চলছে মশা নিধন বা মশার লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রম। ডেঙ্গু মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্থায়ী সমাধান খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্মাণাধীন ভবনে বা শহরের কোনো স্থানে লার্ভা জন্মালে তার সঠিক সমাধান প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অধিকাংশ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে শয্যা খালি নেই। অনেক হাসপাতালে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।

নগরবাসীর অভিযোগ, মশা মারতে প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে বাজেট বাড়াচ্ছে দুই সিটি। কিন্তু কোনোক্রমেই মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও অন্য সময়ে এডিস মশা মারতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। মশা নিধনের নামে প্রতি বছর শতকোটি টাকা পানিতে ফেলছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কাউকে কখনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। অথচ নগরে মশা নিধনের জন্য প্রতি মাসে গৃহ করের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিতে হচ্ছে নাগরিকদের।

দুই সিটিতে বাজেট অনুযায়ী কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে না মন্তব্য করে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান সময়ের আলোকে বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের বাজেট প্রতি বছরই বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আসছে না সুফল। সিটি করপোরেশন মশা নিধনের জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করছে সেটি আদৌ কাজ করছে কি না দেখার বিষয়। সচেতনতা ও বিভিন্ন বাসা-অফিসে গিয়ে অভিযান পরিচালনা জরুরি। আসল বিষয়গুলো বাদ দিয়ে শুধু ওষুধ ছিটালে মশা নিধন সম্পন্ন হবে না। তাদের শুধু একটাই চিন্তা, কত কোটি টাকা বাজেট নিয়েছে আর কত কোটি টাকা ব্যয় করবে। তাদের কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই। ওষুধ ছিটানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সবাইকে নিয়ে কাজ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। শতকোটি টাকা খরচের চিন্তা থেকে বের হয়ে ঠিকমতো কাজ করা জরুরি।

মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি ব্যর্থ হচ্ছে উল্লেখ করে মশা গবেষক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সময়ের আলোকে বলেন, দেশে ২৫ বছর ধরে ডেঙ্গু চোখ রাঙিয়ে আসছে। সবসময় আমরা শুনছি সিটি করপোরেশন অনেক কাজ করছে। অথচ নগরবাসী তেমন সুফল পাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন যে প্রক্রিয়ায় মশা নিয়ন্ত্রণ করছে তা বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ এক নয়। সিটি করপোরেশন মূলত কিউলেক্স মশাকে টার্গেট করে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে এডিস মশা থেকেই যাচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তার উৎসস্থল নির্মূল করতে হবে। কারণ এটি কিউলেক্স মশার মতো নয়। আমি দুই সিটি করপোরেশনের জন্য একটি মডেল তৈরি করে দিয়েছি, যা বাস্তবায়ন ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব নয়। তাদের পদ্ধতিতে কখনো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে না। প্রতি বছরে তারা বলবে, কাজ করছি; কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না। মশা নিধনে প্রতি বছর শতকোটি টাকা বাজেটেও সুফল আসবে না যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। প্রয়োজনে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মশা নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তা হলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ মুহূর্তে হটস্পট ধরে ধরে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। কীটনাশক জনগণের নাগালের মধ্যে থাকলে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে পারত। খোলা রাস্তায় ফগিং করলে তা কোনো কার্যকর হয় না। তবে ভবনের ভেতরে ফগিং করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কীটতত্ত্ববিদ ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চলছে। এর ফলে শতকোটি বাজেটও কাজে আসছে না।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা হটস্পট ধরে ধরে অপারেশন করছি। ডিএনসিসির বার্ষিক ওয়াচ প্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। যেহেতু মাঝে ডেঙ্গু একটু বেড়ে গিয়েছিল তখন ১৫ দিনের একটি প্ল্যান নিয়ে কাজ করেছি। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছিল। ওষুধনির্ভর মশা নিধন কার্যক্রম কখনোই পরিপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে না। যেসব জায়গায় মশা জন্ম নিচ্ছে সেসব উৎস ধ্বংস করতে হবে।

তিনি বলেন, ডিএনসিসির সব রাস্তা, খাল ও জলাশয়কে নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বাসা ও অফিসে সবসময় আমাদের খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। কারণ সেখানে থাকা পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্ম নিতে পারে। আমরা সার্বিকভাবে জনসচেতনতা চালাচ্ছি। দুই ভবনের মাঝের ময়লা না সরানোর ফলে সেখান থেকেও মশার জন্ম হচ্ছে। বিগত বছরগুলো থেকে চলতি বছরে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ডেঙ্গু। এখন যতটুকু আছে সেটিও কমে যাবে। প্রতিটি এলাকায় দুই বেলায় ওষুধ দেওয়া হয়। কেউ যদি আমাদের নির্দিষ্ট কোনো এলাকার কথা বলে তখন সেভাবেই কাজ চালাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের মশা নিধনের কার্যক্রমের গতি অনেক আগে থেকেই বাড়িয়ে দিয়েছি। মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করিনি। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই ডিএসসিসির অভিযান চলে আসছে। শুধু স্প্রে করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ খুব বেশি জরুরি। তাই জনগণকে সংযুক্ত করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করে কাজ করছি। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে জনসচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা শহরের সব থানাগুলোকে পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতেও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলে আসছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতি দিন ডেঙ্গু নিয়ে জাতির কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে আসছে। তারা ডিএসসিরি যেসব রোগী দেখাচ্ছে সেগুলো মূলত হাসপাতালে ভর্তি রোগী। অথচ এসব রোগীর তিন ভাগের দুই ভাগই ঢাকার বাইরের। ঢাকার বাইরের বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তবে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে আমাদের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। যদি আবহাওয়া ঠিক থাকে তা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসব। গত বছর এ সময়ে যে রোগী ছিল চলতি বছর তা দশ ভাগের এক ভাগ। আমরা চাই এ সংখ্যাটকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে।
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মহানগর দায়রা জজের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
বাংলাদেশের ১ কোটি ভিডিও মুছে ফেলল টিকটক
তথ্যপ্রযুক্তি খাত দুই বছরের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে
হিট অফিসার মাসে বেতন পেতেন ৮ লাখ টাকা
আন্দোলনে প্রতিটি শহিদ পরিবার পাবে ৩০ লাখ টাকা: মাহফুজ

সর্বাধিক পঠিত

আইডিয়ালে ভাই-বোন ভর্তিতে শতভাগ কোটা চান অভিভাবকরা
তারেক রহমানের সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি
হিট অফিসার মাসে বেতন পেতেন ৮ লাখ টাকা
আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার অবস্থান জানাল ভারত
দ্রব্যেমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

জাতীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝