বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। তালগাছের সাথে বাবুই পাখির বাসা দেখিয়ে কত মায়েরাই তার সন্তানকে এ কবিতা আবৃতি করে শুনাতেন। দেশের অন্যান্য জনপদের মতো লোহাগাড়ার জনপদেও বিভিন্ন এলাকায় তালগাছ এবং গাছে ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত।
মৌণ-বাক্যহীনা এ তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মেরে আকাশ পানে থাকিয়ে থাকত। লম্বা ডগাযুক্ত পাতার ঝুলন্ত বাসায় দলবদ্ধভাবে বসবাস করত বাবুই পাখির ঝাঁক। খেজুর পাতা বা সেই জাতীয় পাতার সরু বা চিকন আঁশ সংগ্রহ করে এনে নিপুন কারিগরের দক্ষতাকে হার মানিয়ে নিজেরাই ঝুলন্ত বাসা তৈরি করে বসবাস করত।
রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-বাতাসে তারা নিরাপদে বসবাস করত ওই সময়। খাবার সংগ্রহে বের হতো এবং ছানার জন্য বাসায় নিয়ে আসত। ডিমে তা দিয়ে ছানা জন্ম দিত নিজ নিজ বাসায়। পথিক ও শিশু-কিশোরেরা কৌতুহলী মনে চেয়ে থাকত বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসার দিকে। অযত্ন-অবহেলা ও অন্য বিশেষ কারণে তালগাছ ও তালগাছের বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
তাল গাছ লিকলিকে লম্বা। আবার উপরে রয়েছে পাতাযুক্ত লম্বা ডগা। বংশ বিস্তারে কোন বাড়তি যত্ন নেই। অতীতে বয়ষ্কদের সুনজরে সড়কের পাশে বা বাড়ির অদূরে পুকুর পাড়ে এ গাছের জন্ম হতো। হয়তো কেউ কেউ পাকা তালদানা মাটিতে গর্ত করে ঢুকিয়ে দিত। এরপর যত্ন-অযন্ত ও আদর-অনাদরে চারায় পরিণত হয়ে বেড়ে উঠত। বেড়ে উঠার পর জায়গার মালিক এর সুফল ভোগ করতেন এবং মৌসুমে বাবুই পাখির ঝাঁক এসে ঝুলন্ত বাসা বেঁধে বসবাস করত আনন্দ-খুশীতে।
কোন কোন এলাকার লোকজন তালগাছের মাথার অংশ থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে কাঁচা রস সংগ্রহ করে পান করতেন। এছাড়া পাকা ও কচি-কাঁচা তাল সকলের কাছে প্রিয়। পাকা তালের রস দিয়ে আজও অনেক পছন্দের পিঠা তৈরি করছেন বাড়ির মহিলারা। ভাদ্র মাসে বা তৎপূর্বে হাট-বাজারে পাকা তাল বিক্রি হয়। প্রতিটি তালের মূল্য ৬০-৭০ টাকা। অপরদিকে মৌসুমে ৩০-৪০ টাকা মূল্যে প্রতিটি কাঁচা-কচি তাল বিক্রি হয় বটতলী ষ্টেশনসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে। কচি তালের দানা সকলের কাছে প্রিয়। এলাকার তালগাছ বিলুপ্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের বাহির থেকে সংগ্রহ করে এনে এলাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
এলাকার ফল ব্যবসায়ী আলমগীর জানান, মৌসুমে তাঁরা দূর-দূলান্ত থেকে কচি তাল এনে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। যেহেতু, কচি তালের দানা খেতে সকল বয়সের লোকেরাই আগ্রহী। বলা বাহুল্য, একদা অত্র উপজেলার জনপদের বিভিন্ন স্থানে তালগাছ দেখা যেত। কালের আবর্তন-বিবর্তন ও পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে জনপদের ওইসব তালগাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রবীণ লোকেরা আজও হারিয়ে যাওয়া তালগাছ ও তালগাছের ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা নিয়ে খোশ-গল্প করে থাকেন।
কেকে/এমআই