কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে একসময়ের খরস্রোতা ও প্রমত্ত নরসুন্দা নদী। দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদ ব্রহ্মপুত্র থেকে নরসুন্দা নদীর উৎপত্তি। নদীটি হোসেনপুর থেকে কিশোরগঞ্জ শহর হয়ে ৫৭ কিলোমিটার পথ বেয়ে করিমগঞ্জে গিয়ে ধনু নদীতে পড়েছে। এ নদীটির তীরেই একসময় গড়ে ওঠে প্রাচীন ও ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ কিশোরগঞ্জের নগরসভ্যতা।
এ নদীর তীর ঘেঁষে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
বর্তমানে কঙ্কালসার অস্তিত্ব নিয়ে শুধু টিকে থাকা নদীটি দখল আর দূষণে মৃতপ্রায়। দিন যত যাচ্ছে, ততই নাজুক হচ্ছে পরিস্থিতি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নদীর পাড়ের প্রায় ৬৫ শতাংশ জায়গা দখল করে আছেন শতাধিক ব্যক্তি। তবে স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০ জন হবে।
পরিবেশ রক্ষা কর্মীরা জানান, অতীতে নরসুন্দার ভয়াল রূপের কারণে মানুষ আঁতকে উঠত। কিন্তু বর্তমানে নদী ভরাট, অবৈধ দখল, মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, কচুরিপানা নরসুন্দার অতীত ঐতিহ্যকে গ্রাস করে ফেলছে। নদীর পানি ছেয়ে গেছে কচুরিপানার কারণে। দেখে মনে হয় সবুজে ঘেরা বিস্তৃত কোনো মাঠ। নদীর বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবজায়।
পরিবেশবাদীদের দাবি ও আন্দোলনের মুখে বিগত সরকার ২০১২ সালে নরসুন্দা খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনে ১০৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। মর্যাদা পায় নরসুন্দা লেকসিটির। প্রশাসনের উদ্যোগে নদীর দুই পাড়ে বহুতল ভবনসহ বহু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর বেদখল হওয়া জায়গাও উদ্ধার করা হয়। পরে কিছুদিনের মধ্যেই অভিযান থেমে যায়।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নরসুন্দা নদীকে অবৈধ দখলদারদের থেকে রক্ষার্থে সিএস নকশা অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নরসুন্দা নদীতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম কর্তৃক যাচাই চলমান রয়েছে। বাস্তবায়নযোগ্যতা নিরীক্ষার সুপারিশের আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/এজে