দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় আলু রোপণ ও ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষান-কৃষানী ও শ্রমিকরা। তবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার আলুর বীজের দ্বিগুণ দাম, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক-কৃষাণীরা। তবুও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আলু চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন এই উপজেলার চাষিরা।
ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে আগাম আউশ, আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষে এখন সেই জমি প্রস্তুত করে আলু রোপণের সময়। হিমাগার ও দোকান থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তুত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) উপজেলার খামারপাড়া, ছাতিয়ানগড়, টংগুয়া ও পাকেরহাট ঘুরে দেখা যায়, জমি প্রস্তুত শেষে শ্রমিকরা বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করছেন। আবার কোথাও জমিতে আগাম জাতের আলু চারা গজিয়ে ওঠায় কৃষক ও শ্রমিকরা সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, সার ও কীটনাশক স্প্রে কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু চাষে সময় কম ও লাভ বেশি। মাত্র ৫৫-৬০ দিনে মধ্যে আলু উত্তোলন করে ভূট্টা, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। তবে বীজের দাম তদারকি বিষয়ে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি প্রতিনিধির।
খানসামা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৯৫৮ হেক্টর এবং এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। এর মধ্যে দেশী, গ্র্যানুলা, সেভেন, সানসাইন, কুইন এ্যানি, এস্টোরিক্স, সার্পোমিরা, কারেজ জাতের আলু রোপণ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা এবারও লাভবান হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
তবে গতবারের চেয়ে এবছর আলুর বীজের দাম দ্বিগুণ। প্রতি কেজি ২৫-৪৫ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রতি কেজি সেভেন জাতের আলু ১০০-১১০ টাকা, দেশী ৯০ টাকা, সার্পোমিরা ১২০ টাকা, সানসাইন ৮৫ টাকা, এস্টোরিক্স (কার্ডিনাল) ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন পাকেরহাট বাজারে আলু বীজ ব্যবসায়ী আইন উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, আলু চাষিদের আলু চাষে আগ্রহ বেড়েছে। সে তুলনায় আলু বীজের যোগান কম। পাইকারী বাজারে পণ্য সংকট বলে এবার বীজের দাম তুলনামূলক বেশী।
উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. লিটন ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই আলু চাষ করি। কিন্তু এবছর আলু বীজের দাম ও উৎপাদন খরচ অনেক বেশী। প্রতি বিঘায় প্রায় ৯-১০ মণ আলু বীজ প্রয়োজন। এবছর এক বিঘা জমিতে রোপণের জন্য প্রতি কেজি এস্টারিক্স (কার্ডিনাল) জাতের আলু ১১৫ টাকা দরে কিনেছি । গতবছর এই আলু বীজ ছিল ৬৫ টাকা কেজি।
একই এলাকার কৃষক সাবির হোসেন সম্পদ বলেন, আলু চাষে ভালোই লাভ হয়। কিন্তু এবার বীজ ও উৎপাদন খরচ বাড়ায় গত বছরের চেয়ে বিঘাপ্রতি খরচ বেড়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। এতে লাভের পরিমাণ কমে যাবে। তবে আবহাওয়া ও বাজার মূল্য যদি ভাল থাকে তবে আলু চাষে লাভের আশা করছি আবারও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, সারাবছরে বাজারে আলুর দাম বেশী থাকায় কৃষক এবার আলু চাষে আগ্রহ বেশী। আলুর ভাল উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।
দিনাজপুর সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান মুঠোফোনে বলেন, চলতি মৌসুমে চাহিদার চেয়ে আলু বীজের যোগান কম। অন্য অঞ্চল থেকে বীজ আমদানি করা হচ্ছে এসব কারণে তূলনামূলক এবার বীজের দাম বেশী। তবুও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।
কেকে/এজে