চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতার ও ড. কুশলের ওপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর ২০২৪) দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সনাতনী আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র শ্রী শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে গ্রেফতার ও চবি সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সনাতনী আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র শ্রী শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর মুক্তির দাবী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীর ওপর হামলার বিচারের দাবী জানান।
মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশী। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের অধিকার সমান। কোনো সনাতনী অপরাধ করলে রাষ্ট্রীয় আইনে আমরাও তার বিচার চাই। এব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু, কেউ যখন সনাতনীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলে, তাকে যদি রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়, তাহলে আমরা কার কাছে যাবো? ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তাঁর কাছে আমাদের অনেক বেশিই প্রত্যাশা। আশা রাখি তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন, যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হবে না।
রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায় বলেন, সনাতনী জাগরণ মঞ্চের বক্তব্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়৷ বরং এখানে আমরা অধিকার কথা বলছি।
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রামেন্দু পারিয়াল বলেন, সনাতনী জাগরণী মঞ্চের মুখপাত্র সর্বজন শ্রদ্ধেয় চিন্ময় প্রভুকে যেভাবে গ্রেফতার করা হলো এবং আমাদের সহকর্মী কুশল বরণ চক্রবর্তীর উপর যেভাবে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হলো বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আমাদের চিন্ময় প্রভুর অবিলম্বে মুক্তির দাবী করছি। আমরা সনাতনীদের যুক্তিসঙ্গত দাবী নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সরকার যদি মনে করে এক চিন্ময় প্রভুকে গ্রেফতার করে এই আন্দোলন থামানো যাবে, তাহলে অনেক বড় ভুল হবে। বরং, আন্দোলন আরো দ্বিগুণ হবে। দূর্গাপূজাতে ৫ দিন ছুটি চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তাহলে এই অপরাধ আমি বারবার করবো। আমরা এখনো আশাবাদী সরকার একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌছাবে।
রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস বলেন, সনতানীদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ে নেতৃত্বদানকারী চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে৷ অথচ সনাতনীরা তার মাকে যতটুকু শ্রদ্ধা করে; তার দেশ, দেশের জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীতকে ততটুকুই ভালোবাসে। এমনকী তারচেয়ে বেশিই ভালোবাসে। সেখানে সনাতনীরা কখনোই জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করতে পারে না। আপনি একজন সনাতনীকেও পাবেন না যে কী না এই আট দফার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ চিন্ময় প্রভু সকল সনাতনীদের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তার অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া যৌক্তিক। আমাদের সহ মুখপাত্র ড. কুশল বরণের ওপর হামলা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সাধারণ জনগণ হামলা করেছে। কে সেই সাধারণ জনগণ? আমরা তা দেখতে চাই। অবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সংঘাত চাই না।
সংস্কৃত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী প্রবীন সেন বলেন, ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি পটপরিবর্তনে সনাতনীদেরও অংশীদারীত্ব আছে। অথচ, পরিবর্তনের পরে প্রতিবারই আঘাতটা আসে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। আমাদের নাগরিক অধিকার ও উপসনালয়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
কেকে/এমএস