রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১১ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: পাহাড় খেকোদের ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরের অনিহা       ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা      বাধ্যতামূলক অবসরে চার ডিআইজি      ভারতে বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান      বাধ্যতামূলক হচ্ছে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল      ভারতের দিকে তাকিয়ে আ.লীগ নেতারা      কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার      
গ্রামবাংলা
৩ মাস ধরে বেতন-রেশন বন্ধ, চা বাগানে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ
আব্দুল মুহিন (শিপন), হবিগঞ্জ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২:২৬ পিএম  (ভিজিটর : ২৩৯)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

বেতন বন্ধ প্রায় ৩ মাস ধরে এমনকি রেশনও নেই। কেউ অনাহারে অবার কেউ অধাহারে দিনযাপন করেছে। বেতন ও রেশন বন্ধ থাকায় মানবেবেতর পরিস্থিতিতে রয়েছেন চা শ্রমিকরা। ফলে চা বাগানগুলোতে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এমনই পরিস্থিতি ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) হবিগঞ্জ জেলার চন্ডিছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়াও জগদীশপুর চা বাগানের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের।

নতুন কুঁড়ি, কচি পাতা বুড়িয়ে যাচ্ছে গাছেই। চায়ের উৎপাদনে ধস নেমেছে। তীব্র অর্থ সংকটে বর্তমানে বিপর্যস্ত সরকারের ৫১ শতাংশ মালিকানাধীন থাকা এক সময়ের লাভজনক ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)’র ১২টি চা বাগান। চলমান পরিস্থিতিতে চায়ের উৎপাদন বন্ধ থাকায় আগামীতে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের।

বাগান সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এনটিসি চেয়ারম্যান ও ৭ পরিচালক একযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এতে করে আটকে যায় ব্যাংক ঋণ। ফলে অর্থসংকটে পড়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানী। বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিকদের মজুরি  ও রেশন। কোম্পানীর চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবির আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন। পরিষদের ৭ পরিচালকও পদত্যাগ করেছেন। আকস্মিক এই পরিস্থিতিতে তীব্র সংকট দেখা দেয়। এতে লস্করপুর ভ্যালির মূল ৪টি বাগানসহ ৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মরতদের বেতন-রেশন আটকে যায়। একই পরিস্থিতি কোম্পানীর অধীনে থাকা অন্য বাগানগুলোতেও।

চন্ডিছড়া, পারকুল, তেলিয়াপাড়া ও  জগদীশপুর চা বাগানের সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের সাপ্তাহিক মজুরি বন্ধ হয় ২২ আগস্ট থেকে। পরে শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কোনো সমাধান না পেয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কর্মবিরতিতে যান শ্রমিকরা। এরপরেই থমকে যায় বাগানের উৎপাদন। অন্যদিকে নষ্ট হতে শুরু করেছে বাগানে মজুত থাকা ১০ লাখ কেজি তৈরি চা পাতা। প্রতিটি বাগানে দৈনিক ২০ থেকে ২২ হাজার কেজি নতুন কুঁড়ি ও কাঁচা পাতা উত্তোলন করা হয়। শ্রমিক না থাকায় কুঁড়ি ও কচি পাতা নষ্ট হচ্ছে গাছেই। যার কারণে চলমান সংকটের পাশাপাশি উৎপাদনে ধসের কারণে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক সুরঞ্জিত পাশি, হীরেন্দ্র বোনার্জী, বনীতা তাতি, শ্রীমতি অধিকারী, গোপেশ প্রাণ তাতি, গায়েত্রী তাতি বলেন, আমাদের বাগানে ৩ মাস ধরে বেতন ও রেশন বন্ধ। যারা বাহিরের কাজ করতে পারে তারা কোনভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা বাহিরে কাজ করতে পারি নাই তারা কষ্টে দিনযাপন করছি। এক কেজি চাল এনে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। বলার মত কেউ নাই, আমাদের কথা কেউ শুনে না।

তেলিয়াপাড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি খোকন তাতি বলেন, বেতন ছাড়া প্রায় ৪ সপ্তাহ  শ্রমিকরা কাজ করেছে। এরপর বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা কর্মবিরতী পালন করছে বুঝিয়ে কাজ করিয়েছি। শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছে।

চন্ডিছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার বলেন, গত আগষ্টের ১৫/২০ তারিখ থেকে আমাদের বেতন বন্ধ আছে। বেতন না পাওয়ায় অনেক শ্রমিক আছে দু-এক বেলা খায়। আবার অনেক পরিবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে আছে। ৫ সপ্তাহ বেতন না পাওয়ার পরও আমরা কাজ করেছি। পরে ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)’র হবিগঞ্জের চারটিসহ ১২ টি বাগানে কর্মবিরতী ঘোষণা করে শ্রমিকরা। প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতী চলছে।

কেন্দ্রীয় চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বাগানগুলো। সে ক্ষেত্রে এতদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  
 
চন্ডিছড়া চা বাগানের  জেনারেল ম্যানেজার সেলিমুর রহমান বলেন, বাগান বন্ধ রয়েছে ৮/১০ সপ্তাহের মত হবে। শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে এক মাস হবে। এরফলে চা গাছের পাতাগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। বাগানের প্রচুর পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

গত বছরও রেকর্ড গড়ে চায়ের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল বাগানগুলো। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। তবে উৎপাদনে ভাটা পড়ায় সেই লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

কেকে/এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  চা বাগান   চা শ্রমিক   হবিগঞ্জ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আইইবি’র উদ্যোগে আরবান ডেভেলপমেন্ট সেমিনার কাল
‘রাতের ভোট আর হতে দেব না’
ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মীর নেওয়াজ
ধর্ষণের শাস্তি ‘প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড’ করার দাবিতে মানববন্ধন
পদ্মার চরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী

সর্বাধিক পঠিত

বিদ্যালয়ে না গিয়েও সুবিধা ভোগের অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে
টঙ্গীতে আ.লীগের নেত্রীসহ পাঁচজন গ্রেফতার
ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মীর নেওয়াজ
বোরো চাষে পানির মহা সংকটে কুষ্টিয়ার লক্ষাধিক কৃষক
পাহাড় খেকোদের ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদফতরের অনিহা

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝