সততায় অন্তরের প্রশান্তি। সততা মানবচরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ। মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ধনী হোক বা গরিব, মানবজীবনের প্রতিটা সেক্টরের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল সততা।
এমনই এক গল্পের নায়ক সাভারের রিকশাচালক (৭০) বাদশা মিয়া। তার সততা আর মানবিকতায় আপ্লুত হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম- বিআইজেএফ’র সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় হারিয়ে যাওয়া ম্যানিব্যাগ, ডেবিট কার্ড, এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ফিরে পেয়েছেন আইনজীবী খোন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রিকশাচালক বাদশা মিয়া ওই আইনজীবীর হারিয়ে যাওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দেন। এ বিষয়ে আইনজীবী খোন্দকার হাসান শাহরিয়ার খোলা কাগজকে বলেন, গতকাল বুধবার এলিফ্যান্ট রোড থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সময় আমার মানিব্যাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হারিয়ে যায়। মানিব্যাগে ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আইডি কার্ড, ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইডি কার্ড, ঢাকা ট্যাক্সেস বারের আইডি কার্ড, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের আইডি কার্ড, মিনা বাজার, স্বপ্ন ও আগোরার মেম্বারশিপ কার্ড, দুটি পেনড্রাইভ-সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাগজপত্র ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেটি পাইনি। যে কারণে কাল সারাদিনই মনটা অনেক বিষন্ন ছিল। স্বাভাবিক অনেক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, অনেক শিডিউল বাতিল করেছি।
“এরইমধ্যে গতকাল রাতে হঠাৎ করেই সাভার থেকে একটি ফোন কল পাই। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন ছাত্র আমাকে জানায় তার বাবা একজন রিকশাচালক। তিনি টিএসসি এলাকায় আমার মানিব্যাগটি পেয়েছেন এবং তিনি সেটি সঙ্গে করে সাভারে তার বাসায় নিয়ে গেছেন। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আইডি কার্ডে আমার নাম্বার দেখে আমাকে ফোন করেছেন। আজ সকাল সাড়ে আটটায় এলিফ্যান্ট রোডে সেই রিকশাচালক ৭০ বছর বয়সী বাদশা মিয়া আমার সঙ্গে দেখা করে আমার মানিব্যাগসহ সব জিনিসপত্র ফেরত দিয়েছেন। বাদশা মিয়ার কাছে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে জানলাম। এটাও জানলাম যে তার ছেলে শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার পরিবারকে আমি তাৎক্ষণিকভাবে যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহায়তা দিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও করব- ইনশাআল্লাহ। আপনারাও কেউ সাহায্য করতে চাইলে আমাকে জানাবেন, ওনার ফোন নাম্বার দিয়ে দেব।”
আইনজীবী খোন্দকার হাসান খোলা কাগজকে আরও বলেন, বাদশা মিয়ার মতো সৎ মানুষ আছে বলেই আজও হয়ত বাংলাদেশ টিকে আছে। আজও আমরা স্বপ্ন দেখি একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর। অন্য কেউ মানিব্যাগটি পেলে হয়ত কার্ডগুলো ফেলে দিত। তাতে সাময়িকভাবে আমার পেশাগত এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডে সমস্যা সৃষ্টি হতো। কিন্তু বাদশা মিয়া যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরনের মানুষদের পাশে সবসময় থাকা প্রয়োজন। বাদশা মিয়ার মতো মানুষগুলোই আমাদের অনুপ্রেরণা এবং শক্তি। তারা আছে বলেই আমরা আজও সমাজ এবং দেশকে ভালো করার নতুন স্বপ্ন দেখতে পারি।
কেকে/এজে