শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫,
২৭ পৌষ ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম      শমী কায়সারের ব্যাংকের সবধরনের হিসাব তলব      যানজটের কারণে জনগণের কাছে বিএনপির দুঃখ প্রকাশ      লেবাননের নতুন প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন      ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি      ভারতীয় জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহারের তথ্য ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়      অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন: সাইফুল হক      
জাতীয়
ইসকনকাণ্ডে বিক্ষুব্ধ দেশ
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ৯:১২ পিএম  (ভিজিটর : ৪১)
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

* স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ
* দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, জড়িতদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
* ভারতের উদ্বেগে কড়া জবাব দিলো বাংলাদেশ
* পুলিশের তিন মামলায় আসামি ১৪৭৬, আটক ৩৩

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, আলেম-সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা  হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

এ হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ইসকনকে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থি সংগঠন হিসেবে দাবি করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ এবং আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতারে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সেই উদ্বেগের কড়া জবাব দেয়া হয়।

এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সকাল থেকেই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে যোগ দেন লাখো মানুষ। এর আগে সকালে চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে প্রথম ও জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে আইনজীবী সাইফুলের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। প্রথম জানাজায় যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। জানাজায় হাসনাত, সারজিস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

এসময় দ্রুত সময়ের মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা। এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিও জানান সারজিস ও হাসনাত। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে ইসকন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই জঙ্গি সংগঠন সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতে বসেই স্বৈরাচার হাসিনা যত ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমরা রুখে দেবো। বাংলাদেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদী এখানে ঠাঁই নেই। ইসকনের বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না ছাত্রজনতা। তাই অবিলম্বে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘দেশের সাধারণ সনাতনীরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে আমরা বেঁচে থাকতে তা কোনোভাবেই হতে দেবো না। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সবাইকে। ফ্যাসিবাদদের রুখে দিতে জুলাই আগস্টের মতো আবারও মাঠে থাকবে ছাত্রজনতা।’

ভারতের উদ্বেগ বাংলাদেশের জবাব : চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতারে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশ। রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সেই উদ্বেগের জবাব দেয়া হয়। জবাবে বলা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ২৬ নভেম্বর মিডিয়ার কাছে দেয়া ভারতের বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। অতিশয় হতাশা ও গভীরভাবে অনুভূতিতে আঘাতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করছে যে, শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতারের পর থেকে কিছু মহল তা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার জানাচ্ছে যে, এমন অপ্রমাণিত বিবৃতি শুধু সত্যের অপলাপই নয়, একই সঙ্গে তা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি। সব ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষের মধ্যে যে সম্প্রীতি আছে তার প্রতিফলন নয় এই বিবৃতি।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ : ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবারও  আন্দোলন হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ গায়েবানা জানাযা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাদের- নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার; শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; ১,২,৩,৪ ইসকন তুই বাংলা ছাড়; ভারতীয় দালালরা, হুশিয়ার সাবধান; ইসকন এর গালে জুতা মার তালে তালে; উগ্রবাদী হিন্দু হুশিয়ার সাবধান; একটা একটা ইসকন ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর; ইসকনের পিঠের চামড়া তুলে নিবো আমরা; মোদির দুই গালে জুতা মার তালে তালে; ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না; চিন্ময়ের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না; ইসকনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; শাহবাগীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ; তুমি কে আমি কে, সাইফুল সাইফুল; ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইনি নোটিশ :
ইসকনকে আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থি সংগঠন হিসেবে দাবি করে সংগঠনটি নিষিদ্ধ এবং আইনজীবী হত্যার বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার ১০ আইনজীবীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল এ আইনি নোটিশ পাঠান। এ আইনজীবীরা হলেন- মফিজুর রহমান মোস্তাফিজ, নিজাম উদ্দিন, আব্দুল হান্নান ভূঞাঁ হৃদয়, তৌহিদুল ইসলাম শান্ত, আতিকুল ইসলাম, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. রাসেল মাহমুদ, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাহফুজুর রহমান ও আল মোমেন।

নোটিশে বলা হয়েছে, ইসকন একটি উগ্রপন্থি সংগঠন। যার প্রধান কাজ হচ্ছে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি। সংগঠনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মৌলিক বিষয় স্বীকার করে না। সনাতন মন্দিরগুলো দখল করে, মসজিদে হামলা করে। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটায়।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, আগস্ট থেকে দেশে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পেছনেও এর ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেফতার হলে গত মঙ্গলবার তাকে আদালতে উপস্থাপনের পর ইসকনের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, সংগঠনটি নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে।

পুলিশের ৩ মামলায় আসামি ১৪৭৬ : এদিকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার নগরের কোতোয়ালী থানা পুলিশের করা এসব মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো আইনজীবী হত্যার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ২০ জন পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং ৭ জন আইনজীবী আলিফ হত্যায় জড়িত।

কেকে/এজে
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন ঘোষণা চাই’
সোনারগাঁয়ে বিদেশি মদসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার
বাংলাদেশী কৃষকের মরদেহ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ৪
পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম

সর্বাধিক পঠিত

বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর, রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা
গঙ্গাচড়ায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ত্রৈ-বার্ষিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত
লামায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার
পালিয়েছে গ্রেফতারকৃত সাবেক ওসি শাহ আলম
বিদ্যুৎ না থাকলেও মিটারে বেশি বিল আসার কারণ জানাল বিএন্ডটি

জাতীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝