জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, ভিনদেশের দাসত্বের বিরুদ্ধে ছিল বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের হলরুমে ‘দি ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ’ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মুজিবুর রহমান বলেন, যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় সেই স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। তৎকালীন জামায়েত নেতৃবৃন্দ বুঝেছিলেন, সেই স্বাধীনতা হবে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ভারতের কৃতজ্ঞ হয়ে থাকা। যার ফলে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। জামায়াতের এই ধারণা বিগত ৫৩ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে যখন যারাই শাসন ক্ষমতায় ছিল তারাই ভারতের তাঁবেদারি করেছে। তাহলে কি একজন নাগরিক হিসেবে বলা যায় আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করেছি?- এটি জনগণের বিবেকের কাছেই জামায়াতে ইসলামীর প্রশ্ন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়নি বরং বাংলাদেশ প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করেছে। যার ফলে ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখনো হাসিনা ভারতের স্বার্থে ভারতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে যড়যন্ত্র করছে। ছাত্র জনতার অর্জিত এই স্বাধীনতা রক্ষায় দল-মত নির্বিশিষে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ২০২৪ এর বিপ্লব অর্জনে জামায়াত-শিবির যেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছে বিপ্লব রক্ষায় সেভাবেই অবদান রাখবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, গত ১৬ বছরে ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, ভূমি দখল, দুর্নীতির কারিগর শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই প্রথমে পিলখানা হত্যাকান্ড এরপর জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করতে শুরু করে। একে একে হেফাজতে ইসলামীকে সহ যারাই আওয়ামী লীগের জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তাদেরকেই আওয়ামী লীগ নিঃশেষ করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে শুধু মাত্র ক্ষমতায় থেকে ভারতের তাঁবেদারি করার লক্ষ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ কে শুধু ক্ষমতা থেকেই উচ্ছেদ করেনি বরং ক্ষমতাচ্যুত করে আওয়ামী লীগ কে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দুজন শাসক পালিয়ে গেছে একজন লক্ষ্মণ সেন অপরজন শেখ হাসিনা।
তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের ভাষা বুঝতে না পারায় আওয়ামী লীগ কে পালাতে হয়েছে। আপনারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আপনাদের উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা আছে। জনগণ চায় তাদেরকে বাদ দিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হোক। তাহলে জনগণের সমর্থন আপনাদের উপর অব্যাহত থাকবে। পরাজিত শক্তির ফাঁদে পা দিবেন না।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এরশাদের শাসন ব্যবস্থা দেশবাসী দেখেছে। একবার জামায়াতে ইসলামীকে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কতটা কল্যাণকর সেটি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশবাসী বুঝতে পারবে।
পরে রমনা থানা আমির মো. আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অগ্রসর কর্মী ও রুকন সদস্য শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর ড. এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মহানগরী দক্ষিণের সহকারী অফিস সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও রমনা থানার বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এমআই