পাগলা মসজিদের দানের একাউন্টের মূল টাকা কোথায় আয়-ব্যায় করা হচ্ছে, কোথায় রাখা হচ্ছে সবকিছুই যেন ধোঁয়াশা। মানুষের আস্তা এবং বিশ্বাসের জায়গা পাগলা মসজিদ এটাকে নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাগলা মসজিদের টাকা গণনার সময় এসব অভিযোগ তুলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পরে আমরা ছাত্র-জনতা সকল কিছু মধ্যেই অংশগ্রহণ করি এবং খোঁজ-খবর নেই কোথাও কোন অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে কি না। এরই ধারাবাহিকতায় বিপ্লবের পরে পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। কিশোরগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চাচ্ছিল বছরের পর বছর পাগলা মসজিদের দানবাক্সে কোটি কোটি টাকা আসছে। এই টাকা কোথায় রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাগলা মসজিদের কত কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে। দেশের মানুষ এবং কিশোরগঞ্জের আপামর ছাত্র জনতা প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের প্রশাসন যারা পাগলা মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে তারা এটা ক্লিয়ার করে নাই। কত টাকা আসতেছে, স্বর্ণ-রূপা কি আসতেছে, বৈদেশিক মুদ্রা কি আসতেছে ওই টাকা কোথায় রাখা হচ্ছে। কাদের মাধ্যমে রাখা হচ্ছে, কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে। সবকিছুই ধোয়াশা।
অভিযোগ করে ইকরাম হোসেন আরও বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি অতীতে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো তারা বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে পাগলা মসজিদের টাকা সরিয়েছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যারা পাগলা মসজিদের দায়িত্বে রয়েছেন তারা যদি অনতিবিলম্বে দেশবাসীর কাছে পাগলা মসজিদের অর্থের বিষয়টি স্পষ্ট না করে তাহলে কিশোরগঞ্জের ছাত্র-জনতাসহ এদেশের মানুষ এই হিসাব নিবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আমরা গত তারিখে জানতে চেয়েছিলাম পাগলা মসজিদের একাউন্টে কত টাকা রয়েছে। এই টাকা কোথায় রক্ষিত রয়েছে। এই টাকা কোথায় কোথায় ব্যয় করা হয়। ওনারা বলেছিল এগুলো স্পষ্ট করবে কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনি ও জনসম্মুখে কোন কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন আরও বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন বিপ্লবের পরে যখন টাকা গণনা করা হয়েছিল ধরা পড়েছিল যে এখান থেকে টাকা চুরি করা হয়েছে, গণনার সময়। পরবর্তীতে তারা এটাকে লামচাম দিয়ে সমাধান করেছে।
তিনি আরও বলেন, কথা ছিল টাকা গণনার সময় সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মী সংগঠন কিশোরগঞ্জকে যারা রিপ্রেজেন্ট করে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তাদেরকে নিয়েই এই দানের টাকা গণনার কার্যক্রমটি হবে। আজকে যখন দানবাক্স-সসিন্দু খোলা হয় আমাদের ছাত্র-জনতাসহ কোনো সংগঠনকেই তারা জানায়নি। যারা প্রশাসনে রয়েছে তাদের আচরণ অনেকটাই লুকোচুরির মত। যারা এই মসজিদের দায়িত্বে রয়েছে তারা কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তারা ফেঁপে ফুলে কলা গাছ হয়েছে।
সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন আরও বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমাদেরকে বলা হয়েছিল বিপ্লবে যারা অংশগ্রহণ করেছিল, নীতি-নৈতিক আদর্শে আদর্শবান ব্যক্তি তাদেরকে নিয়ে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। তাদের মাধ্যমেই এই পাগল মসজিদ পরিচালিত হবে। যেহেতু দেশবাসীসহ বহির্বিশ্ব থেকেও মানুষ এই মসজিদে দান করে তাদের আস্থার জায়গাটা যেনো ঠিক থাকে। মানুষের জবাবদিহিতার জায়গা থেকে যেনো সকল কিছু প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি একটা কমিটি হয়েছে এই কমিটির সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। কারা এটার দায়িত্বে আছে সব কিছুই আসলে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা। আমি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই কেন লুকোচুরি করা হচ্ছে। আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই আপনারা যে টাকাটা দিচ্ছেন কোথায় দিচ্ছেন, এই টাকা দিয়ে কি হচ্ছে আপনারা প্রশ্ন তুলুন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা যদি প্রশাসন থেকে সুস্পষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ না দেওয়া হয়, হিসাব প্রকাশ না করা হয় তাহলে কিশোরগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশের ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এর হিসাব নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭ টায় ৩ মাস ১৪ দিন পর পাগল মসজিদ ১০টি দানবাক্স ও একটি ট্রাংক খোলা হয়। এতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা।
টাকা গণনাকালে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খানকে সাংবাদ কর্মীরা প্রশ্ন করে পাগলা মসজিদের একাউন্টে সর্বমোট কত টাকা রয়েছে? তিনি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যান।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়াকেও প্রশ্ন করা হয় পাগলা মসজিদের একাউন্টে সর্বমোট কত টাকা রয়েছে? তিনিও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি। তিনি জানান, এটা আমি বলতে পারবো না এটা মাননীয় জেলা প্রশাসক এটার সভাপতি উনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদেরকে জানতে দেয় না। একাউন্টটি স্যার নিজে মেনটেইন করেন।
ওয়াকফ এস্টেট কিশোরগঞ্জেট ওয়াক্ফর হিসাব নিরীক্ষক মো. আলাউদ্দিনকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে মোট কত টাকা রয়েছে এ বিষয়টি আমি এখন আপনাদেরকে বলবো না। জেলা প্রশাসক মহোদয় কিছুক্ষণ আগে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি আমিও দেবো না। এটা সরকারের সিকিউরিটির ব্যাপার। গত অর্থবছরে পাগলা মসজিদ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা আয় করেছেন।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামের কাছেও জানতে চাওয়া হয় পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে মোট কত টাকা রয়েছে। তিনি জানান, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমি তা বলতে বলতে বাধ্য নই। একাউন্টের মূল হিসাব একমাত্র একাউন্টের মালিকেরে জানার অধিকার রয়েছে।
কেকে/এমএস