ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে অবৈধভাবে ইতালী পাড়ি জমাচ্ছে শরীয়তপুরের শত শত যুবক। দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালী পাড়ি দিতে গিয়ে সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের ৮ মাসে নিখোঁজ হয়েছে ১৮ যুবক। লিবিয়া নিয়ে আটক করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করা হয় মুক্তিপণের টাকা। তবে তাতেও মুক্তি মিলেনি শরীয়তপুরের ১৮ যুবকের। এদিকে টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দরিচর দাদপুর গ্রামের হাতেম শেখের পুত্র জাফর শেখ, চর নিয়ামতপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান খানের পুত্র আতিকুর রহমান, একই গ্রামের ছলিম জমাদ্দারের পুত্র রাশিদুল, বোরহান মৃধার পুত্র সিরাজ, চর চটাং গ্রামের জাহাঙ্গীর মোড়লের পুত্র রফিক মোড়ল, একই গ্রামের ইকবাল কাজীর পুত্র শামীম কাজী, আব্দুল মান্নান ওঝাঁর পুত্র মিরাজ ওঝাঁ, দক্ষিণ ভাষাণ চর গ্রামের সালাম আকনের পুত্র দিদার হোসাইন আকন, একই গ্রামের ইদ্রিস আলী খাঁর পুত্র মো. আমিনুল ইসলাম, মো. সুফিয়ার সরদারের পুত্র মো. ফারুক সরদার, দক্ষিণ মধ্যপাড়া গ্রামের চুন্নু ভূঁইয়ার পুত্র আল আমীন ভূঁইয়া, কদমতলী গ্রামের মো. সালমান সিকদারের পুত্র মো. শাহীন সিকদারসহ ১৮ জন যুবক অবৈধপথে ইতালী যাওয়ার সময় গত ২২ মার্চ থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজদের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে চলছে কান্নার রোল।
ভাগ্য বদলের আশায় দালালদের দেখানো পথে ইতালীর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন ওই যুবকরা। যুবকের খোঁজ পাচ্ছেন না তাদের স্বজনরা। নিখোঁজরা কারো নাতি, কারো ছেলে, আবার কারো স্বামী। ভুক্তভোগী ইদ্রিস আলী খাঁ, কমলা, শারমিন, মিরাজ ওঁঝা, মো. চুন্নুসহ অনেকে জানান, লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালী পৌঁচ্ছে দেওয়ার কথা বলে ১২ থেকে ১৮ লাখ করে টাকা হাতিয়ে নেন একই এলাকার স্থানীয় দালাল রাশেদ খান ও টুন্নু খান। লিবিয়ায় যাওয়ার পর ওই যুবকরা আটক হন মাফিয়া চক্রের হাতে। লিবিয়ায় জিম্মি করে প্রত্যেকের কাছ থেকে মুক্তিপণের জন্য আরো ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা করে আদায় করে দালাল চক্রটি। এরপর গত ২২ মার্চ থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নিখোঁজ ১৮ যুবকের। অদ্যাবদি খোঁজ মিলেনি তাদের। মুক্তিপণের টাকা আদায়ের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্য রাশেদ ও টুন্নু খান।
এব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত দালালদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা তাদেকে পাওয়া যায়নি। দালালদের বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা বদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়, পরে কথা হয় দালের এক চাচির সাথে।
নিখোঁজদের লিবিয়া পাঠানোর কথা স্বীকার করেন দালাল রাশেদ ও টুন্নু খানের চাচী।
মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিখোঁজদের সন্ধান পেতে প্রবাসী কল্যাণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় ও সেনা ক্যাম্পে লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। অভিযুক্ত দালাল রাশেদ খান ও টুন্নু খান এলাকা থেকে পালিয়ে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এমএস