নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুষ্টিয়া, সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন মৎস্য শিকারিরা মেতেছেন চলনবিলের বাউৎ উৎসবে। বিলের নানা প্রজাতির মাছ শিকার করছে বাউৎ উৎসবের মাধ্যমে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে। দল বেঁধে বিলে নেমে মনের আনন্দে মাছ শিকার শুরু করেন শিকারিরা। কেউ পাচ্ছেন বোয়াল, কেউ বা শোল, রুই, কাতল। অনেকে ফিরছেন খালি হাতে। এভাবেই চলনবিলে মাছ শিকারে মেতেছেন সৌখিন মৎস্য শিকারিরা।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউৎ উৎসবে অংশ নেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ। তবে, এ বছর বিলে মিলছে না কাঙ্খিত মাছের দেখা। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ মৎস শিকারিরা। তাদের অভিযোগ, অবৈধ জাল আর গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে মাছ ও পোকামাকড় মরে গিয়ে পানিতে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ।
চলন বিলাঞ্চলে এমন উৎসব চলছে যুগের পর যুগ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে মাসব্যাপি চলে এই উৎসব। চলনবিলের রুহুল বিল, ডিকশির বিল, রামের বিলসহ বিভিন্ন বিলে মাসব্যাপী চলে এই বাউৎ উৎসব।
সিরাজগঞ্জ থেকে মাছ শিকারে আসা নয়ন আলী বলেন, বাউৎ উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। এবার সিরাজগঞ্জ থেকে ৬টি বাস নিয়ে দুই শতাধিক লোক এসেছি মাছ ধরতে। এত লোক একসঙ্গে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। খুব ভাল লেগেছে।
নাটোর থেকে আসা আরেক মৎস্য শিকারি আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিবছরই আসি এই বাউৎ উৎসবে। কিন্তু এবার মাছ নেই বললেই চলে। তবে আমরা মাছ পাই বা না পাই, সবাই মিলে আনন্দ করি এটাই ভাল লাগে।
ফরিদপুর উপজেলার মাছ শিকারি আজাহার আলী বলেন, প্রভাবশালীরা আগেই চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে সব মাছ মাইরে লিছে। পরে তারা বিলে গ্যাস ট্যাবলেট দিছে, যে কারণে ছোটখাটো মাছ যা আছে বেশিরভাগ মরে গেছে। পানিতেও দুর্গন্ধ ম্যালা। এজন্যি মাছ নাই ইবার।
বিলে বাউত উৎসব দেখতে আসা আশিকুর রহমান, নায়েব ইসলাম, ফিরোজ হোসেন, জুয়েল আহমেদসহ কয়েকজন বলেন, বিলে যেভাবে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়েছে তাতে দেশি মাছের প্রজনন নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল ব্যবহার হচ্ছে। এখনই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। না হলে আগামীতে দেশি মাছের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির এই উৎসবও হারিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুদা বলেন, মাছের প্রজনন ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে বাউত উৎসব পালন করতে হবে। এ বিষয়ে মৎস্য শিকারিদের সচতেন হতে হবে। সেইসঙ্গে বিলে গ্যাস ট্যাবলেট বা অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছের ও পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পেলে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।