স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে নিম্নমানের সার্টিফিকেট ও মার্কশীট দেওয়ার অভিযোগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের। এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে একাধিক শিক্ষার্থীকে।শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন শিক্ষার্থী চারটি বছর পরিশ্রম করে যা অর্জন করে তার দালিলিক প্রমাণ তার মার্কশীট ও সার্টিফিকেট। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট খুবি উন্নত ও যথাযথ মান নিশ্চিত করে সতর্কতার সাথে নির্ভুলভাবে তৈরী করে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদমই বিপরীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সার্টিফিকেট ও মার্কশীট দেওয়া হয় তার পেপারের মান খুবই নিম্ন। সার্টিফিকেটের লেখার ফ্রন্ট বা সাজানো সঠিক ভাবে থাকে না। শিক্ষার্থীর নাম, রেজাল্টের সিজিপিএ তে ভুল থাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানানেও ভুল থাকে । এছাড়াও এলাইনমেন্ট কোনো ডকুমেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করে থাকে। এলাইনমেন্ট ঠিকভাবে না দেওয়াতে আকর্ষণীয় হচ্ছে না সার্টিফিকেট।
এ বিষয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আফ্রিদি বলেন,আমরা চারজন শিক্ষার্থী।কিন্তু আমাদের সার্টিফিকেটরে কোনোটারই এলাইনমেন্ট ঠিক ছিল না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট এত অসংগতি এর চেয়ে নিজেরা বানিয়ে নিলেই ভালো হয়।
একাউন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী অনিক চৌধুরী তপু বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্টের ফন্ট এবং এলাইনমেন্টের নিম্নমান বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির আবেদনকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। এমন মানহীন ট্রান্সক্রিপ্ট প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে, যা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে, এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাদারিত্ব এবং শিক্ষার মান নিয়েও নেতিবাচক বার্তা দেয়। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আশা থাকবে, নতুন প্রশাসন উন্নত ফরম্যাট এবং মানসম্মত ডিজাইন নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
সার্টিফিকেট বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তার সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করলেই বোঝা যায় আমাদের অবস্থান কি। একজন শিক্ষার্থীর জন্য এই ডকুমেন্টস গুলো কত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব থেকে উদাসীন এগুলো তৈরীর ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।
ফার্মেসি বিভাগ থেকে সদ্য অনার্স শেষ করা ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান উন্নত করতে হলে এই স্থান গুলো ঠিক করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর চার বছরের অর্জন যা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অথচো নিম্নমানের একটি কাগজ দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে। আর ডিজাইন আর স্পেলিং এর ভুলের বিষয় আর নাই বলি। আমি নতুন প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো এই বিষয়টি সবার আগে যেন তারা ঠিক করার উদ্যোগ নেয়।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গোলাম হায়দার বলেন, বিভিন্ন বিভাগের ক্রেডিট কম-বেশি থাকে এজন্য অনেক সময় এলাইনমেন্ট কম বেশি হতে পারে। আমিতো টেকনিকেল না। এ বিষয়ে আমার যে প্রোগ্রামার আছে সে ভালো বলতে পারবে।আমি তাকে বলেছি সে ঠিক করবে।
সার্টিফিকেটের সার্বিক মানের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুরাদ হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সার্টিফিকেটের কাগজ ও সার্বিক মানের বিষয়ে মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চেষ্টা করছি মান বৃদ্ধির জন্য। ডিজাইন ও বানান ভুলের জন্য আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যথাযথ উদ্যোগ নিবে আশা করছি।
কেকে/এইচএস